Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের

মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার পথে বাঁকুড়া শহরে পুরনো এসপি অফিসের সামনে তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বাম নেতারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

মনোনয়নের একটা দিন তো বাড়ল, কিন্তু ওই দিনটায় প্রশাসনিক অফিসে ঢুকতে পারবেন তো প্রার্থীরা? শুক্রবার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের আলোচনায় সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে এল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে নিরাপত্তা নিয়ে কী পদক্ষেপ হয় সে দিকেই তাকিয়ে দুই জেলার বিরোধী শিবির।

এখনও পর্যন্ত যা মনোনয়ন জমা পড়েছে, তাতে বাঁকুড়া জেলা পরিষদ এবং জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে রয়েছে শাসকদল। এ দিকে, মনোনয়ন চলার সময়ে বাঁকুড়া ১ বাদে জেলার প্রায় সব ব্লকেই বিরোধী প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ঝামেলাও কম হয়নি। রানিবাঁধে সংঘর্ষে খুন হয়েছেন বিজেপির এক প্রার্থী। ওন্দা ব্লক অফিসের সামনে গোলমালে জখম হন পুলিশ কর্মী। জেলা শাসকের দফতর চত্বরে আক্রান্ত হন বিজেপির রাজ্য নেতারা। বড়জোড়া ব্লক দফতর চত্বরে ঝামেলায় মাথা ফাটে সিপিএম নেতার। মনোনয়ন জমা করতে যাওয়ার পথে বাঁকুড়া শহরে পুরনো এসপি অফিসের সামনে তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বাম নেতারা।

এদিন হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন বিরোধী দল। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কিঙ্কর পোশাক বলেন, “মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের কী ভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছে তা সবাই জানেন। এখন দেখার, মনোনয়ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে মেটাতে নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা নেয়।” তিনি জানান, হাইকোর্টের রায় শোনার পরেই জেলায় সিপিএমের এরিয়া কমিটিগুলিকে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জেলাকে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন এরিয়া কমিটিতে এ দিন বৈঠকও হয়। জেলার এক সিপিএম নেতা বলেন, “আমাদের সব জায়গাতেই বিকল্প প্রার্থীও খুঁজে রাখা হয়েছে। কেউ হুমকির মুখে ঘাবড়ে গিয়ে ভোটে লড়তে না চাইলে বিকল্প প্রার্থী মনোনয়ন পেশ করবেন।”

বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “তৃণমূল পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে জোট বেঁধে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ওই জোট ভেঙে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করতে পারে কি না সে দিকেই আমরা তাকিয়ে রয়েছি।’’ তিনি জানান, বিজেপির যে সব প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে পারেননি তাঁদের সঙ্গে দল প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখে চলেছে। ফলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন জানানো হলে সব প্রার্থীই যাবেন।

পুরুলিয়ায় বিরোধীরা অধিকাংশ আসনেই মনোনয়ন জমা করেছেন। আবার হামলার ঘটনাও ঘটেছে। কাশীপুরে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএমের বরিষ্ঠ নেতা বাসুদেব আচারিয়া। হুড়া, বলরামপুর ও বরাবাজারেও সংঘর্ষ হয়েছে। এ দিন সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে মনোনয়ন ও নির্বাচন হলে পুরুলিয়াতে আমারা আরো বেশি আসনে মনোনয়ন দিতে পারব। বহু আসনে জিতবেন বামফ্রন্টের প্রার্থীরা।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জাতিগত শংসাপত্রের কিছু সমস্যা থাকায় আমরা কয়েকটি আসনে মনোনয়ন দিতে পারিনি। সেই আসনগুলিতে এ বার মনোনয়ন জমা করবেন আমাদের প্রার্থীরা।’’

তবে বিরোধীদের কোনও কথাতেই আমল দিচ্ছে না শাসকদল। তৃণমূল নেতারা আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন হয়ে গিয়েছে। তাই আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। বিরোধীরা যদি রাজ্য সরকারের উন্নয়ন দেখে প্রার্থীই না পায় তাহলে আমরা কী করতে পারি?” আর পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধীরা নির্বাচনী লড়াইতে যুঝতে পারবে না বুঝে আদালতে গিয়ে ভোটের প্রক্রিয়া বানচাল করার চেষ্টা করেছিল। আদালত রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের উপরে আস্থা রেখেই নির্বাচন পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE