অব্যবহারে জীর্ণ সরকারি সব্জি বাজার। (ডান দিকে) রাস্তার উপরে বসছে হাট। যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত ময়ূরেশ্বর এখন গঞ্জের খেতাব ছাড়িয়ে শহরের পথে পা বাড়িয়েছে। বাড়ছে জনসংখ্যাও। কিন্তু কাছেপিঠে পিঠে কোনও হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্যও এলাকার মানুষকে ছুটতে হয় ১০-১২ কিলোমিটার দুরের মল্লারপুর কিংবা সাঁইথিয়া হাসপাতালে।
হাসপাতাল গড়ার জন্য এককাট্টা হয়ে ওঠেন ময়ূরেশ্বর এবং এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন রায়, শিক্ষক আব্দুল মাবুদ, প্রাক্তন বিধায়ক কানাইলাল সাহা, লালচাঁদ ফুলমালি, দ্বারিকানাথ মণ্ডল, মনি সাহা প্রমুখের নেতৃত্বে ধর্ম- দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে গড়ে ওঠে ‘এলাকার জনগণ’ নামে একটি কমিটিও। উদ্যোক্তারা প্রথমে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রশাসন, উপযুক্ত জায়গা পেলে হাসপাতাল করার প্রতিশ্রুতি দেয় বলে এলাকাবাসীর দাবি।
ঘটনা হল, প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই জায়গা যোগাড়ে পথে নামেন উদ্যোক্তারা। প্রথমে তাঁরা চাঁদা তুলে জায়গা কেনার চেষ্টা করেন। কিন্তু সংগৃহিত টাকায় তা কেনা সম্ভব হয় না। তখন মনোরঞ্জনবাবু ধরেন তাঁর ছাত্র চিকিৎসক আব্দুল মাবুদকে। মাবুদ সাহেব জায়গা কিনে দিতে সম্মত হন। সেই জায়গার জন্য এগিয়ে আসেন অবস্থাপন্ন পরিবারের আজিমা বেগম এবং তাঁর পালিত কন্যা হাসিদা বেগম। উদ্যোক্তাদের অনুরোধে কম দামে তাঁরা হাসপাতালের জন্য আব্দুল মাবুদকে জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেন।
এত কিছুর পরও হাসপাতাল হল না ময়ূরেশ্বরে। রাজনৈতিক জটিলতায় প্রশাসন হাত গুটিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। স্বাক্ষর সংগ্রহ, বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়া থেকে ভোট বয়কটের ডাকও দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু সে সমস্যার সমাধান হয়নি আজও। মাঝখান থেকে জমি হারিয়ে আফশোস করছেন হাসিদারা। তাঁদের বক্তব্য, “হাসপাতালের জন্য কম দামে জমি দিয়ে ছিলাম। সেই জমি এখন ক্রেতার আত্মীয়রা চাষ করছে।”
আক্ষেপ অন্যতম উদ্যোক্তা দ্বারিকানাথ মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, “হাসপাতালের জন্য আমরাই জমি যোগাড় করেছিলাম। কিন্তু সেই জায়গার সদ্ব্যবহার আজও হল না। মাবুদ সাহেব অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার হাসপাতাল গড়লে ওই জমি তিনি আজও ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত।”
হাসপাতালের মতোই বাসিন্দাদের আক্ষেপ রয়েছে হাট নিয়েও। রবি এবং বৃহস্পতিবারে হাট বসে ময়ূরেশ্বরে। উপযুক্ত জায়গার অভাবে বিক্রেতারা পসরা নিয়ে রাস্তার উপরেই বসে পড়েন বলে অভিযোগ। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন পথচারীরা। বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ কাছেই রয়েছে হাই স্কুল। দশম শ্রেনীর ছাত্র অর্ঘ্য পাত্র, গোরাঙ্গ শর্মা বলেন, “হাটের জন্য স্কুলে ঢুকতে খুবই সমস্যা বিশেষত সকালে স্কুলের সময় তো যুদ্ধ করতে হয়।”
হাটতলাতে তবু সপ্তাহে দু’দিন, কিন্তু ক্যানাল অফিস মোড়ে বারোমাসই রাস্তা অবরোধ করে হাট বসে। অথচ ওই মোড় ছুঁয়েই গিয়েছে সাঁইথিয়া-রামপুরহাট, মল্লারপুর এবং গদাধরপুর সড়ক। তাই ওই এলাকায় যানজট রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই বলে তাঁদের অভিযোগ।
প্রশাসন অবশ্য যানজট মুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে স্থানীয় খাড় পুকুরের পাড়ে একটি সবজি বাজার তৈরি করা হয়। কিন্তু কোনও বিক্রেতাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেনি প্রশাসন। দেখভালের অভাবে কয়েক লক্ষ টাকার ওই সবজি বাজারের এখন ভগ্নদশা। স্থানীয় জনমানসে তাই চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রমজান সেখ, আব্দুর রহিমরা বলেন, “ওই বাজার নির্মাণের আগে প্রশাসনের সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা ছিল। তাহলেই বোঝা যেত জায়গাটি সবজি বাজারের উপযুক্ত নয়। মাঝখান থেকে সরকারি টাকাগুলি জলে গেল। ওই পুকুর পাড়ে খেলার সুযোগ হারাতে হল পাড়ার ছেলেদের।”
তাহলে কি যানজট মুক্তির কোনও উপায় নেই? এলাকার বাসিন্দারাই বিকল্প দিশাও দেখাচ্ছেন। তাঁদের মতে, মুয়রেশ্বর ঢোকার মুখ থেকে সেচখালের পাড় বরাবর কুস্তোর গ্রাম লাগোয়া গদাধরপুরের রাস্তা পর্যন্ত বাইপাস গড়া হলে সমস্যার অনেকখানিই সমাধান হতে পারে। সেক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ জনিত তেমন কোনও সমস্যা হবে না। কারণ এমনিতেই প্রস্তাবিত বাইপাসে রয়েছে লাল মোড়ামের রাস্তা।
প্রস্তাব শুনে স্থানীয় ময়ূরেশ্বর ২নং ব্লকের বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “গঠনমূলক ওই প্রস্তাবটি কার্যকর করার জন্য গুরুত্ব সহকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কোনও সমস্যা না হলে দ্রুত রূপায়ণের ব্যবস্থা করা হবে।” হাটের মতোই বেশকিছু পাড়ার ক্ষোভ রয়েছে নিকাশি নিয়েও। তার মধ্যে গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দারা সব থেকে বেশি সরব। ওই পাড়ার কালাম সেখ, জাফর সেখদের বাড়ির সামনেই রয়েছে কাঁচা নিকাশি নালা। আর্বজনায় ভরা সেই নালা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
রহিমা বিবি, তফেজা বিবিরা বলেন, “শুধু দুগন্ধই নয়, মশা মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। বর্ষাকালে তো নালার নোংরা জল উপছে আমাদের ঘরেও ঢুকে পড়ে। এমন কি নিকাশি নালার ময়লা জমে জমে বুজে গিয়েছে আমাদের ব্যবহার্য মিঞাগড়ে এবং চাঁদ পুকুরও।”
অভিযোগ, বারবার বলা স্বত্ত্বেও পাকা নালা নির্মাণ কিংবা কোনও সংস্কারের ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। একই অভিযোগ শোনা গেল ঘোষ পাড়াতেও। ওই পাড়ার বুড়ি পুকুরের পাড়ে একাধিক গোবর গাদা। লাগোয়া গোবর গ্যাসের চৌবাচ্চা থেকে এসে মিশছে পচা গোবর। পুকুরের জল দুর্গন্ধে ভরা। ছায়া ঘোষ, জ্যোৎস্না দাসরা বলেন, “ওই জল ব্যবহার করা দূরের কথা, গবাদি পশুকে স্নান করানো পর্যন্ত যায় না। পঞ্চায়েতকে বলেও পুকুর সংস্কার কিংবা দূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পঞ্চায়েত প্রধান ফুলমণি মাড্ডি বলেন, “পুকুর সংস্কারের ব্যাপারে কেউ কিছু জানায়নি। তবু খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশ্চিম পাড়ায় পাকা নিকাশি নালা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বীরভূম।’
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy