Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

অপারেশন টেবিলে ‘শজারুর কাঁটা’!

অপারেশন শুরু হতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তার বলে উঠলেন, ‘‘স্যার, এ তো ‘শজারুর কাঁটা’! হৃৎপিণ্ড ডান দিকে!’’ হাসলেন সার্জেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচার শেষে জুনিয়রকে কাছে ডেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুদীপ্তবাবু বললেন, ‘‘শরদিন্দু পড়েছো তা হলে!’’

অর্চনা ঘোড়ুই। নিজস্ব চিত্র।

অর্চনা ঘোড়ুই। নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

অপারেশন শুরু হতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তার বলে উঠলেন, ‘‘স্যার, এ তো ‘শজারুর কাঁটা’! হৃৎপিণ্ড ডান দিকে!’’ হাসলেন সার্জেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। অস্ত্রোপচার শেষে জুনিয়রকে কাছে ডেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুদীপ্তবাবু বললেন, ‘‘শরদিন্দু পড়েছো তা হলে!’’

ব্যোমকেশে বক্সীর ওই কাহিনি আমবাঙালিকে কবেই জানিয়ে দিয়েছে যে, কিছু মানুষের শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো থাকে উল্টো দিকে। গল্পে দেবাশিস ভট্টের বুক ফুঁড়ে দিয়েছিল শজারুর কাঁটা। তিনি বেঁচে যান হৃৎপিণ্ডটা ডান দিকে হওয়ায়। মেদিনীপুর মেডিক্যালের ওই রোগিণী অর্চনা ঘোড়ুইয়েরও দেবাশিসের মতো ‘সবই উল্টো। চিকিৎসা পরিভাষায় একেই বলে, ‘সাইটাস ইনভার্সাস’। সুদীপ্তবাবু জানাচ্ছেন, লাখে এক জনের এমনটা থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: জতুগৃহ হোটেলে মৃত দুই

বুধবার মাইক্রোসার্জারি করে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের দশগ্রামের বাসিন্দা অর্চনাদেবীর অ্যাপেন্ডিক্স বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনিতে ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস’ জটিল অসুখ নয়। তবে ডান দিকের বদলে ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ বাঁ দিকে থাকায় অসুখ বুঝতেই সময় লেগেছে। অস্ত্রোপচারে ঝুঁকিও ছিল। শেষমেশ সবই মিটেছে নির্বিঘ্নে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বললেন, “এখানে এমন আর কোনও রোগীর কথা মনে পড়ছে না।”

মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্চনাদেবী।—নিজস্ব চিত্র।

তলপেটের বাঁ দিকে যন্ত্রণা নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে সুদীপ্তবাবুকে দেখাতে আসেন অর্চনাদেবী। আলট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না সুদীপ্তবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পেটে হাত দিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল, অ্যাপেন্ডিসাইটিস। তাই আবার ইউএসজি-র সঙ্গে বুকের এক্স-রে করতে বলি। তার পর বুঝি, ‘সাইটাস ইনভার্সাস’। বুধবার অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন বেশ কয়েক জন উৎসাহী সার্জেন, নার্স, অ্যানাস্থেটিস্ট এবং দশ-বারো জন জুনিয়র ডাক্তার। সুদীপ্তবাবুর কথায়, “চেয়েছিলাম ছাত্রছাত্রীরা এই বিরল অস্ত্রোপচার দেখুক, শিখুক।”

মজুর খেটে দিন গুজরান করেন অর্চনাদেবী। সাধারণ প্রসবে দুই সন্তানের জন্মের সময়ে ইউএসজি হয়েছিল তাঁর। তখন কিছুই ধরা পড়েনি। এ দিন বলছিলেন, ‘‘নিজের শরীরের উল্টো হিসেবটা এখানে না এলে জানতামই না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Situs Inversus Left-sided appendicitis patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy