তারের নীচ দিয়ে এভাবেই খেলছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল-লাগোয়া খেলার মাঠ। সেই মাঠের উপর দিয়ে চলে গেছে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন। মাঠে ছাত্রছাত্রীরা খেলার সময় তার ছিঁড়ে যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা হরিণডাঙা হাইস্কুলের মাঠের উপর দিয়ে যাওয়া ওই লাইনটি অন্যত্র সরানোর জন্য একাধিক বার বিভিন্ন দফতরে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
১৯৪৮ সালে প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা জমির উপর তৈরি হয়েছিল স্কুলটি। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। দিনে দিনে স্কুল কলেবরে বাড়লেও এবং নানা উন্নতি হলেও জমির অভাবে ভাল খেলার মাঠ ছিল না। তাই বছর তিনেক আগে স্কুল-লাগোয়া সাড়ে ৫ বিঘা সরকারি জমি নিয়ে এবং ব্যক্তি মালিকানায় ২ বিঘা জলা জমি কিনে খেলার মাঠ তৈরি করা হয়। মাঠ তৈরির বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই দোস্থপুর পাওয়ার হাউজ থেকে ১১০০ ভোল্টেজের হাইটেনশন তারের মাধ্যমে ফলতার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুত্ সরবরাহ হয়। ওই লাইনের প্রায় ২০০ মিটার অংশ লম্বা মাঠের উপর দিয়ে গিয়েছে।
স্কুল সূত্রে খবর, মাঠে বসানো দু’টি স্তম্ভের উপর দিয়ে যাওয়া হাইটেনশন তারের নীচেই ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর খেলাধূলো করে আসছে। আচমকা ঝড়-বৃষ্টি হলেই ওই তার দুলতে থাকে। খেলার সময় যে কোনও দিন তার ছিঁড়ে পড়ে বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। বর্ষা কালে ইন্টার ক্লাস ফুটবল খেলার সময় বল তারে লেগে প্রায়ই আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী, বাজ পড়লেও আগুন জ্বলে ওঠে বলে জানা গেল। সেই খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত থাকেন বিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সকলকেই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
ওই মাঠে ২০০৮ ও ২০১১ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বছরের ছাত্রছাত্রীদের রাজ্য খোখো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও ২০১১ সালে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ওই প্রতিযোগিতার উদ্বোধনও করেছিলেন। সে সময় বিদ্যুত্ লাইনের সমস্যার কথা মন্ত্রীদের কাছে বলা হলেও কোনও কাজ হয়নি। স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক শুভেন্দু ঘোষ বলেন, “ওই মাঠে ছাত্রছাত্রীদের খেলাতে নিয়ে গিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। অল্প ঝড় বৃষ্টিতেই ওই হাইটেনশন তার ছিঁড়ে পড়ার উপক্রম হয়। ফুটবল খেলার সময় বল তারে লেগে গিয়ে ছিঁড়ে পড়ার সম্ভবনা প্রবল।” প্রধান শিক্ষক অসীম মণ্ডল বলেন, “ওই হাইটেনশন লাইনটি মাঠ থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্যুত্ দফতরে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওরা লাইন সরানোর শর্ত হিসেবে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেছিল। ওই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের না থাকায় বিদ্যুত্ দফতর আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” বিদ্যুত্ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন লাইন বসানো হয়েছিল, তখন কোনও আপত্তি আসেনি। পরে লাইন আছে জেনেও স্কুল কর্তৃপক্ষ সেখানে মাঠ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এখন তাঁরা যদি লাইন সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারেন, তবে তাঁদেরই শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধান শিক্ষক জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বিধায়ক, এমনকী জেলা শিক্ষা দফতরে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমস্যার কথা মেনে বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ বলেন, “লাইনটি সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় যে অর্থ চাওয়া হয়েছিল, তা স্কুল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। ফলে তা সরানো যায়নি। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিভাগীয় মন্ত্রীর কছে জানাব।” ফলতা বিদ্যুত্ দফতরের সহকারী বাস্তুকার সুখেন্দু মাইতি বলেন, “ওরা ফের আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেব।” আশ্বাস পাওয়া গেলেও পড়ুয়াদের জীবনের ঝুঁকি আপাতত কাটার লক্ষণ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy