ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যানের দুর্ভোগ থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে আগাম গাড়ি ‘বুকিং’-এর ব্যবসা বাড়ছে কলকাতায়। কিন্তু ব্যবসা সম্প্রসারণে রয়ে গিয়েছে কিছু সমস্যা:
• আগাম বুকিং করা ট্যাক্সির ভাড়া অনেকটাই বেশি।
• সাধারণ মিটার-ট্যাক্সির ক্ষেত্রে এখনও এই সুবিধা তেমন ছড়ায়নি।
কলকাতার থেকে এ ব্যাপারে এগিয়ে কিন্তু মুম্বই। আমজনতাকে নিত্য ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে মহারাষ্ট্র সরকার সাধারণ মিটার-ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও আগাম ‘বুকিং’ পরিষেবা চালু করেছে। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, আজকের দুনিয়ার চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহারাষ্ট্র যদি এমন পদক্ষেপ করতে পারে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ কেন পিছিয়ে?
বাণিজ্যিক গাড়ি আগাম ভাড়া করার দুটি সমস্যা। প্রথমত, অনেক আগেই তা বুক করতে হয়। হঠাত্ প্রয়োজন হলে গাড়ি না-ও মিলতে পারে। দ্বিতীয়ত, যদি বা মেলেও, ভাড়া যেমন বেশি, তেমনই কমপক্ষে নির্দিষ্ট একটা ভাড়া গুণতেই হয়, যা স্বল্প প্রয়োজনে অযৌক্তিক।
শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাই সাধারণ মিটার ট্যাক্সি বা বিভিন্ন রেডিও-ট্যাক্সি পরিষেবার চাহিদাই বেশি। রেডিও-ট্যাক্সিও আগাম বুক করতে হয়। তার ভাড়াও সাধারণ ট্যাক্সি-র চেয়ে কিছুটা বেশি। সাধারণত তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও হয়। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো বড় শহরের ধাঁচে কলকাতাতেও চালু হয়েছে ওই ধরনের রেডিও-ট্যাক্সি। কারণ যাত্রীদের চাহিদা ও জোগানের ফারাককেই ব্যবসার নয়া সূত্র হিসেবে দেখছে বিভিন্ন সংস্থা।
এরই মধ্যে কিছুটা আশা জুগিয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতায় পা রাখল মুম্বইয়ের সংস্থা ‘বুকমাইক্যাব’। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অবিনাশ গুপ্ত জানান, আপাতত ৫০টি বাণিজ্যিক গাড়ির সঙ্গে তাঁরা গাঁটছড়া বেঁধেছেন। সংস্থার কল সেন্টারে ফোন করে বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে আগাম গাড়ি ‘বুক’ করতে পারবেন যাত্রীরা। আপাতত অবশ্য গাড়ি পেতে ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে। মূলত কিমি প্রতি নির্দিষ্ট ভাড়া বেঁধে দেওয়া হবে। তবে গোড়ায় একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে আর একটি এলাকা পর্যন্ত অথবা বিমানবন্দর বা রেল স্টেশন পর্যন্ত পরিষেবা মিলবে। গত পাঁচ সপ্তাহে শহরে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পরিষেবায় ভাল সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
মুম্বইয়ে সাধারণ মিটার-ট্যাক্সি-র ক্ষেত্রেও এ রকম আগাম পরিষেবা চালু করেছেন তাঁরা। অবিনাশবাবু জানান, বছর দু’য়েক আগে এ জন্য মহারাষ্ট্র সরকার বিধি চালু করায় সাধারণ ট্যাক্সি-র ক্ষেত্রেও এই ব্যবসা ছড়াতে সুবিধা হয়েছে। তাঁর ইঙ্গিত, সাধারণ মিটার-ট্যাক্সি-র ক্ষেত্রে এ রাজ্যেও তেমন বিধি থাকলে বেশি সংখ্যক যাত্রী এই পরিষেবা পাবেন। সার্বিক ভাবে ব্যবসাও বাড়বে।
কলকাতার আর এক সংস্থা ‘সিওর -ট্যাক্সিজ’ অবশ্য এখন সাধারণ মিটার-ট্যাক্সি-র ক্ষেত্রেই এই আগাম ‘বুকিং’ পরিষেবা চালু করেছে। সরকারি বিধি থাকলে এই পরিষেবার জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে মনে করেন সংস্থাটির কর্তা পিট পুডাইট-ও। আদতে মিজোরামের আইজলের বাসিন্দা পিট সেখানেই প্রথমে এই ব্যবসা শুরু করেন। এ বছরের গোড়ায় কলকাতায় পরীক্ষা -মূলক ভাবে এই পরিষেবা চালু করার পরে এখন দৈনিক প্রায় ছ’শো ট্যাক্সিচালক তাঁদের মাধ্যমে ব্যবসা চালান। সাধারণ মিটার-ট্যাক্সি-র ক্ষেত্রে যাত্রীদের মিটারের ভাড়ার ১০% অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। আর চালকের কাছ থেকে ভাড়ার ৫% নেয় সংস্থাটি। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিটার-ট্যাক্সির ক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি এবং হিসাবও আলাদা। পিটের দাবি, এই মডেলে ব্যবসা চালিয়ে ট্যাক্সিচালকেরা অনেক বেশি ভাড়া পাচ্ছেন। পাশাপাশি, চালকের যাবতীয় নথিপত্রের নকল ও তথ্য সংস্থার কাছে জমা থাকায় যাত্রী সুরক্ষাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কম।
সব মিলিয়ে নতুন ব্যবসার সূত্র তৈরির সঙ্গে সঙ্গে নতুন পথেরও সন্ধান দিচ্ছে এই পরিষেবা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy