বাটানগর কারখানা চত্বর। —নিজস্ব চিত্র
বাটা উপনগরী প্রকল্পের জট কাটল। তবে বাটানগর কারখানার উদ্বৃত্ত জমিতে এই প্রকল্প গড়ে তোলার ছাড়পত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিকাঠামো তৈরির জন্য কিছু শর্ত বেঁধে দিল রাজ্য সরকার।
মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় শর্তগুলি জানিয়ে বলেন, “১২ একরের উপর ৩০০ থেকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন আপৎকালীন ভিত্তিতে ৫ জন রোগী ভর্তি করতে হবে। দৈনিক ২০ জন দুঃস্থ রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ওষুধ বিনা পয়সায় দিতে হবে। রাজ্য সরকারের কোনও মন্ত্রী বা মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান সুপারিশ করলে সেই রোগীকে ভর্তি নিতে হবে।” বাদবাকি শর্তের মধ্যে রয়েছে: পুরনো স্কুলের সঙ্গে আরও বেশি জায়গা যুক্ত করে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ। ১৫ একরে শিল্প তালুক, ৬.৯ একর জমিতে পরিবহণ হাব, ৩০ একরে গল্ফ কোর্স তৈরি। উপনগরীর ১৩ একর জমিতে রাস্তাঘাট-সহ ন্যূনতম পরিষেবা তৈরি করতে হবে বলেও জানান সুব্রতবাবু।
বাটার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই প্রকল্প তৈরি করছে রিভারব্যাঙ্ক হোল্ডিং প্রাইভেট লিমিটেড। সংস্থার প্রধান সুমিত ডাবরিওয়াল এ দিন জানান, প্রকল্প এলাকায় সামাজিক পরিকাঠামো তৈরি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। সেই সূত্রে স্কুল ও হাসপাতাল তৈরি হবে। তাঁর দাবি, তিন বছরের মধ্যে সামাজিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ বর্গ ফুটের বেশি জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
বাটা কারখানার ৩০৯ একর ‘খাস’ (ফাঁকা) জমিতে প্রকল্প গড়া নিয়ে চুক্তি হয়েছিল ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে। চুক্তি অনুযায়ী, এর মধ্যে ২৬২ একর জমি বিক্রি (ফ্রি হোল্ড) করা হয় রিভারব্যাঙ্ককে। বাকি ৪৭ একর জমি বাটাকে দেওয়া হয় তাদের কর্মীদের পরিবারের আবাসন তৈরির জন্য। এ জন্য সরকারের ঘরে আসার কথা ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে বাটা কারখানা সংস্কার ও তাদের আবাসন তৈরির জন্য ১০০ কোটি টাকা দেয় সরকার। আর ৩৭.৮৮ কোটি টাকা ‘কনসেশন’ হিসাবে দেওয়া হয় রিভারব্যাঙ্ক সংস্থাকে। ফলে ৩০৯ একর ‘খাস’ জমি বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে আসে মাত্র ১২.১২ কোটি টাকা। এর ৩ বছর পরে স্থানীয় বিক্ষোভ হওয়ায় রিভারব্যাঙ্ক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে স্কুল, হাসপাতাল তৈরির জন্য ২৬২ একরের মধ্যে ১৩.২ একর ফেরত নেয় রাজ্য। সরকারি পরিভাষায় যা ‘গিফ্ট ডিড’ হিসাবে পরিচিত। আর এই নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
বাটা কারখানার ফাঁকা জমি বিক্রি করে তার একটি অংশ ‘উপহার’ হিসাবে কী করে ফিরিয়ে নিল রাজ্য, তা জানতে চেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৎকালীন আইএএস অফিসার খলিল আহমেদকে ‘শো-কজ’ করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমি সংস্কার দফতর। কারণ, সরকারের পক্ষে তিনিই চুক্তিতে সই করেন। জবাবে যে ৯ পাতার চিঠি দেন আহমেদ, তার ছত্রে ছত্রে তিনি মূল চুক্তি নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তোলেন। শো-কজ-এর চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়, মূল চুক্তি নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি (জিও) থাকা সত্ত্বেও কেন তা অগ্রাহ্য করে জমি ফেরত নেওয়া হল? জবাবে ওই আইএএস অফিসার জানিয়েছিলেন, মূল চুক্তির পরেই বাটানগর হাসপাতাল ভাঙে বেসরকারি সংস্থা। দু’টি সরকারি স্কুলও তারা ভাঙতে চেয়েছিল। এই নিয়ে স্থানীয় স্তরে উত্তেজনা ছড়ায়। সমস্যা সমাধানে ওই ১৩.২ একর জমি ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জেলা কালেক্টর হিসাবে তিনি চুক্তিতে সই করেছেন।
এই জবাবের ভিত্তিতে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য সচিব সমর ঘোষের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়ে সরকার। কমিটির সুপারিশ মেনেই নয়া শর্ত আরোপ করে রাজ্য। গত ৩০ জুন মন্ত্রিসভার শিল্প বিষয়ক সাব কমিটির বৈঠকে প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যা এ দিন ঘোষিত হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy