প্রতীকী ছবি।
কলকাতায় লিটারে ৭৫ তো মুম্বইতে ৮০ টাকা! প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে পেট্রোলের দাম। ডিজেলের দামও পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ।
তেলের দাম নিয়ে মধ্যবিত্তের ক্ষোভ আকাশ ছোঁয়ার আগেই সক্রিয় হতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দামের ছেঁকা কমাতে বাজেটে উৎপাদন শুল্ক কমানো হতে পারে।
কলকাতায় এখন পেট্রোলের দাম ৭৫ টাকার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। তার মধ্যে ১৯ টাকা ৪৮ পয়সাই কেন্দ্রের শুল্ক। ডিজেলেও ১৫ টাকা ৩৩ পয়সা শুল্ক দিতে হয়। তার সঙ্গে যোগ হয় রাজ্যের ভ্যাট। বিরোধীদের অভিযোগের আঙুল কেন্দ্রের শুল্কের দিকে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারে যখন অশোধিত তেলের দাম তলানিতে ছিল, তখন তার ফায়দা মানুষকে পেতে দেয়নি মোদী সরকার। কর বসিয়ে কোষাগার ভরেছে। এখনও একই ভাবে ক্রেতাদের শুষে চলেছে।
এ দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামের উপর। তার দাম ফের বাড়ছে। কমার আশু সম্ভাবনাও নেই। কারণ, মধ্য এশিয়ার ১৩টি তেল উৎপাদক দেশের সংগঠন ‘ওপেক’ তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। রাশিয়াও সরবরাহ কমিয়েছে। লিবিয়ার উৎপাদনও ওঠানামা করছে। তার উপরে গত কালই আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) বিশ্বের অর্থনীতি ২০১৮ ও ২০১৯-এ ৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছে। যা এ বছরের তুলনায় বেশি। ফলে তেলের চাহিদা ও দাম, দুই-ই বাড়বে বলেই অনুমান।
তেল মন্ত্রক তাই অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, উৎপাদন শুল্ক কমানো হোক। এ রপর পেট্রোল-ডিজেলকেও জিএসটি-র আওতায় আনা হোক। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন শুল্ক, ভ্যাটের বদলে শুধু জিএসটি চাপবে। কমবে করের বোঝা।
আরও পড়ুন: নোটবন্দিতে উন্নত জীবন, দাবি মোদীর
তেলের দাম কমানো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা হলেও সমস্যা অন্যত্র। শুল্ক কমানোর অর্থ, কেন্দ্রের আয় কমে যাওয়া। এমনিতেই রাজকোষ ঘাটতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জেটলি। তেলের শুল্ক থেকে চলতি অর্থ বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকা তোলার অঙ্ক কষেছিলেন তিনি। যা তাঁর মোট আয়ের ১৬ শতাংশেরও বেশি। আগামী অর্থ বছর ফুরোলেই লোকসভা ভোট। মোদী সরকারকে এখন দরাজ হাতে খরচ করতে হবে। এমন সময় আয়ের উৎস ছাঁটার অর্থ, নিজের পায়ে কুড়ুল মারা।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি গুজরাতের ভোট মিটতেই ধাপে ধাপে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েছে। পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৩.৩১ টাকা, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৪.৮৬ টাকা। কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ আমলে ব্যারেল পিছু অশোধিত তেলের যখন দাম ১০০ ডলারের বেশি ছিল, তখনও জ্বালানির দাম এত ছিল না।
আমেরিকায় ‘শেল অয়েল’-এর ভাণ্ডার আবিষ্কার এবং তেলের চাহিদা কমা সত্ত্বেও সৌদি আরব উৎপাদন না কমানোয় মোদী জমানায় একটা সময় অশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের নীচে চলে গিয়েছিল। রাজকোষ ঘাটতি ও বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি সামাল দিতেই তা প্রধান সহায় হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার তা ৭০ ডলার ছুঁয়েছে।
দেশের জ্বালানির ৮০ শতাংশই যখন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, তখন সেই দাম বাড়লে জেটলির বাজেটের অঙ্ক গোলমাল হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই অক্টোবরে ২ টাকা উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি সহ্য করতে হয়েছে জেটলিকে। জিএসটি থেকে আয় প্রতি মাসে কমছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ডের জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন জেটলি। ব্যাঙ্কের পুঁজির জন্য বাজেট থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হচ্ছে তাঁকে। এ বার তেল থেকে আয় কমে গেলে তিনি ঘাটতি সামাল দেবেন কী করে, প্রশ্ন সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy