আন্তর্জাতিক মানের বড় ব্যাঙ্ক তৈরিকে পাখির চোখ করে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তি চায় মোদী সরকার। লক্ষ্য, তার মাধ্যমে অন্তত ৩-৪টি বিশাল ব্যাঙ্ক তৈরির, যারা আয়তন ও পরিষেবার গুণমানে পাল্লা দিতে পারবে ব্যাঙ্কিং বহুজাতিকদের সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ব্যাঙ্কের এই সংযুক্তিকরণের জন্য ভাবনার তালিকায় রয়েছে কানাড়া ব্যাঙ্ক, বিজয়া ব্যাঙ্ক, দেনা ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ইত্যাদির নামও।
ব্যাঙ্ক শিল্পের কর্মী সংগঠনের আশঙ্কা, এতে গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। কিন্তু ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন ও ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারের বক্তব্য, এর দরুন সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন, এমন ভাবার কারণ নেই। কারণ, বড় ব্যাঙ্কের পাশাপাশি ছোট ব্যাঙ্ক, স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক ও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক তা তাঁদের দরজায় পৌঁছে দেবে।
ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতার বিষয়টি উপেক্ষা করার উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে বড় ব্যাঙ্কের প্রয়োজন রয়েছে। মূলধন সংগ্রহে তার সুবিধা হবে। কেন্দ্রের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না।’’
দেবব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বড় অঙ্কের ঋণ পেতে তখন চট করে একাধিক ব্যাঙ্কের কাছে যেতে হবে না। কোনও ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হওয়ার দিকে যাচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারিতেও সুবিধা হবে।’’
আরও পড়ুন: চা-বাগানে সঙ্কট কাটতে অন্তত তিন বছর
কিন্তু কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে হাঁটতে চায় ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি। ২২ অগস্ট দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ব্যাঙ্ক শিল্পে সাধারণ কর্মী ও অফিসারদের ৯টি ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ ইউএফবিইউ। ১৫ সেপ্টেম্বর সংসদের সামনে ধর্নার পরিকল্পনাও রয়েছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোশিয়েসনের সভাপতি রাজেন নাগর এবং অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘সংযুক্তির পরিকল্পনা বানচাল করতে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
ইউনিয়ন নেতাদের মতে, ব্যাঙ্ক আকারে বড় হলে ভাল ব্যবসা ও মোটা মুনাফা হয়তো করবে। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ কতটা উপকৃত হবেন, সে বিষয়ে সংশয় আছে। রাজেনবাবু বলেন, ‘‘সংযুক্তিকরণের পরে ব্যবসার নিরিখে বিশ্বে ৪৮তম স্থানে চলে গিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। কিন্তু তার পরেই তারা সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম জমার অঙ্ক (মিনিমাম ব্যালান্স) বাড়িয়েছে। যা অবশ্যই সাধারণ গ্রাহকদের স্বার্থবিরোধী।’’
পরিকল্পনা
• সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২১ থেকে কমিয়ে ১০-১২টিতে নামাতে চায় কেন্দ্র
• তা করার পরিকল্পনা বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে মেশানোর মাধ্যমে
• লক্ষ্য, ৩-৪টি বিশাল মাপের ও আন্তর্জাতিক মানের ব্যাঙ্ক তৈরি। যারা বিশ্ব বাজারে তুল্যমূল্য প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে বহুজাতিক ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে
• নির্দিষ্ট অঞ্চল বা ক্ষেত্রকে পরিষেবা দিতে থাকবে কিছু ছোট ও মাঝারি ব্যাঙ্কও
• এ বিষয়ে একমত অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল। জুনে খোদ জেটলিই জানিয়েছেন, এই কাজ চলছে তৎপরতার সঙ্গে
• স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে ধাপে ধাপে মেশানো হয়েছে সাত সহযোগী ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ককে
• প্রাথমিক চিন্তা-ভাবনার মধ্যে রয়েছে কানাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিজয়া ব্যাঙ্ক, দেনা ব্যাঙ্কের মতো আয়তনে ছোট ব্যাঙ্ককে মেশানো
• এক ছাদের তলায় আসার কথা ভাবতে বলা হয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক ও সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের কর্তাদেরও
• পঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্ককে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে মেশানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে
পক্ষে-বিপক্ষে
• বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ব্যাঙ্ক সহজে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে। কমবে কেন্দ্র নির্ভরতা, ঋণ খেলাপ। বাড়বে দক্ষতাও
• কর্মী সংগঠনের দাবি, ব্যাহত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। ব্যাঙ্কের মুনাফা বাড়লেও ক্ষুণ্ণ হবে গ্রাহক স্বার্থ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy