অমিত মিত্র।
মনমোহন জমানার শেষ দিকে তাঁর সরকারকে নাগাড়ে নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগে বিঁধতেন নরেন্দ্র মোদী। দাবি করতেন, অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে দেখেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে ইউপিএ সরকার। এ বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও সেই নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ শানালেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর দাবি, দেশের আকাশে মন্দার ঘন মেঘ। তার ধাক্কায় কাজ খোয়াচ্ছেন বহু মানুষ। চাহিদায় ভাটা। মুখ থুবড়ে পড়েছে লগ্নি। অথচ সব দেখেও হাত গুটিয়ে বসে কেন্দ্র। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পদক্ষেপ করা তো দূর, উল্টে শিল্প মহলকে নানা ভাবে হয়রান করছে তারা। কাশ্মীরের নাম সরাসরি না করেও তাঁর অভিযোগ, অর্থনীতির সমস্যাকে আলোয় আসতে না দেওয়ার জন্যই চেষ্টা হচ্ছে নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। একই সঙ্গে, উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যে মন্দার প্রকোপকে রুখে দেওয়া গিয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
টানা তিন ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি সঙ্কুচিত হলে, তবেই মন্দার তকমা দেওয়া হয় তাকে। ভারতে সংজ্ঞা মেনে মন্দা তাই হয়নি। কিন্তু অর্থনীতির দশা কতটা বেহাল, তা বোঝাতেই এ দিন বৃদ্ধি থেকে বেকারত্বের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অমিত।
নিশানায় দিল্লি
সংখ্যায় অর্থনীতি
• ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৫.৮ শতাংশে। পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
• এনএসএসও-র রিপোর্টে বেকারত্বের হার ৬.১%। গত সাড়ে চার দশকে যা সর্বোচ্চ।
• রফতানি বাড়ন্ত। চাহিদায় টান দেশের বাজারেও।
• চাহিদা এতটাই তলানিতে যে, উৎপাদন কমাচ্ছে বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা। খবর মিলছে বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়েরও।
সমস্যায় শিল্প
• জুনে শিল্প বৃদ্ধির হার আগের বছরের এই একই সময়ের তুলনায় মাত্র ২%। চার মাসের মধ্যে সব থেকে কম।
২০১৮ সালের জুনে তা ছিল ৭%।
• ওই মাসে কল-কারখানায় উৎপাদনের পরিমাণ ৬.৯% থেকে এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১.২ শতাংশে।
• মূলধনী পণ্যের উৎপাদন সরাসরি কমেছে ৬.৫%। অথচ গত বছর জুনেও তার বৃদ্ধির হার ছিল ৯.৭%। সাধারণত এই পণ্য ব্যবহৃত হয় অন্য পণ্যের উৎপাদনে। তাই তার উৎপাদন কমার অর্থ আগামী দিনে চাহিদা আরও কমার আঁচ পাচ্ছে শিল্প।
• গত বছরের জুনের (৬.৫%) তুলনায় অনেক কম এই জুনে খনন শিল্পের বৃদ্ধিও (১.৬%)।
• এপ্রিল থেকে জুনেও সার্বিক শিল্প বৃদ্ধির হার ৩.৬%। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫.১%।
থমকে লগ্নি
• ২০১৯-২০ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে নতুন প্রকল্পে লগ্নির অঙ্ক ১৫ বছরে সর্বনিম্ন।
• গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ঘোষিত প্রকল্পের তুলনায় এপ্রিল-জুনে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা কমেছে ৮১%। ২০১৮ সালের এপ্রিল-জুনের সাপেক্ষে ৮৭% কম।
• ১৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রকল্পের বাস্তবায়ন আটকে। ১৯৯৫ সালের পরে যা সর্বোচ্চ।
• ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে বিদেশি বিনিয়োগের অঙ্ক
কমেছে ১.০৯%।
সমস্যা আঁচ করেই হালে ব্যাঙ্ক, শিল্প মহল সমেত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, সমস্যা মোকাবিলায় যে ভাবে তৎপর হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি কেন্দ্র। সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে তাঁর দাবি, ৭৮ হাজার লগ্নিকারী দেশ ছেড়ে অনাবাসী ভারতীয় হয়ে গিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আলাদা আইনি ধারা ঢুকিয়ে কেন্দ্র শিল্পপতিদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করছে। শিল্প মহলে ভয়ের বাতাবরণ। তবু কেউ কেউ মুখ খুলছেন।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি নির্মলার কাছে কর-সন্ত্রাস এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে গাফিলতির জন্য গ্রেফতারি নিয়ে সরব হয়েছে শিল্প।
রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তিনি জানান, বিহার পর্যন্ত ফ্রেট করিডর সরকারি অর্থে হলেও তারপর থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত হবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে। তাঁর প্রশ্ন, এই অবস্থায় কোন লগ্নিকারী আসবেন?
গাড়ি শিল্পের দুর্দশা ঘোচাতে তিনি জিএসটি কমানোর পক্ষপাতী কি না, সে বিষয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি অমিত। যেমন বলেননি এ সব নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার কথাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy