স্পুটনিক-১ উপগ্রহ রাশিয়া কক্ষপথে রাখে ১৯৫৭-র ৪ অক্টোবর। মহাকাশ উৎসবের সূচনা সে দিনই। ৮৩ কেজি ওজনের কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর ২৫০ কিলোমিটার উপরে পাক খেয়েছিল। তার ২০ আর ৪০ মেগাহাৎজের দু'টি ট্রান্সমিটারের পাঠানো বেতার তরঙ্গ পৃথিবীর সব রেডিওতেই শোনা গিয়েছিল। আয়নোস্ফিয়ারের অনেক তথ্যও মিলেছিল। তাকে ওপরে তুলেছিল আর-৭ রকেট। ১৯৫৮-র ৩ জানুয়ারি সেটিকে ধ্বংস করে ফেলার এক মাস পর স্পুটনিক-২ মহাকাশে নিয়ে যায় রুশ সারমেয় 'লাইকা'কে। তার বেঁচে থাকাতেই বিশ্বাস হয় মানুষও থাকতে পারবে মহাকাশে। ১৯৬১-র ১২ এপ্রিল প্রথম সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমা করেন। ১৯৭৫-এর এপ্রিলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় ভারতীয় উপগ্রহ আর্যভট্ট মহাকাশে যায়। বাংলাদেশের বয়স তখন মাত্র চার বছর। পাকিস্তানের আগ্রাসনে ব্যতিব্যস্ত বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান। ১৫ আগস্ট তিনি আততায়ীর হাতে নিহত। মৃত্যুতেই তাঁর পুনর্জন্ম। পিতার আদর্শে সঞ্জীবীত কর্মযুদ্ধে অক্লান্ত, তাঁর কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাবার নামে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে তৈরি। দেশের যোগাযোগ আর সম্প্রচারে যার ভূমিকা হবে অসীম। এবার বাংলাদেশের মহাকাশে জয়যাত্রার পালা।
আরও পড়ুন: বিরল অস্ত্রোপচারে সুস্থ তিন পা নিয়ে জন্মানো বাংলাদেশি শিশু
ঠিক ছিল, বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর এটি উৎক্ষেপন করা হবে। হাসিনা রাজি নন। তিনি চান আরও আগে। এমনিতে তাঁর অভিধানে 'কাল' বলে কোনও কথা নেই। সবই আজ। মহাকাশ জয়ের সূচনা তিনি আগেই করতে চান। বিজয় উৎসবের দিন তিনি ব্যস্ত থাকবেন অন্য আনুষ্ঠানিকতায়। সেটা মেনেই টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারামা হালিম চারটে দিন ঠিক করছেন। তার থেকেই হাসিনা উৎক্ষেপনের দিন বেছে নেবেন। আমেরিকার ফ্লোরিডায় উৎক্ষেপনের উদ্বোধন হাসিনার উপস্থিতিতে। সেই গর্বের মুহূর্তটি দেখা যাবে বাংলাদেশেও।
কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্ব 'বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড' এর। এরপর বঙ্গবন্ধু-২, বঙ্গবন্ধু-৩ উৎক্ষেপন পরিচালনা করবে তারাই। স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ ফ্রান্সের 'থ্যালেস অ্যালেসিয়া স্পেস' এর। তাদের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ। এটি নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনার পর আমেরিকার লঞ্চ সাইট 'কেপ কার্নিভাল' এ পাঠানো হবে। ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণ করবে গাজীপুরের জয়দেবপুর আর রাঙামাটির বেতবুনিয়ারে 'বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেড'। নিজস্ব জমিতে দু'টি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। শেষ হতে একটু বাকি। অ্যান্টেনার যন্ত্রপাতি সাইটে পৌঁছেছে। বাকি যন্ত্রপাতি দেশে এসেছে। যে দ্রুততায় কাজ চলছে তাতে নভেম্বরই ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব।
রাশিয়ার ইন্টার স্পুটনিক থেকে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের আর বি টাল স্লট কিনেছে বাংলাদেশ। প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এখন বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়ায় দিতে হয় বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। নিজেদের স্যাটেলাইটে হলে সে খরচ বাঁচবে। এই সাফল্য পাকিস্তান কীভাবে নেবে সেটা অবশ্য তাদের ব্যাপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy