আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল, বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের তিন বছর পূর্তিতে দেওয়া ভাষণে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।’’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত করতে সহায়তা করবে।’’ তাঁর আশা, রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন তাতে সব রাজনৈতিক দল আস্থা রাখবে। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা বিএনপি-র ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, জনগণ আর ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।
জাতীয় সম্প্রচার বাংলাদেশ টেলিভিশনে সন্ধ্যার ভাষণে শেখ হাসিনা তাঁর এই মেয়াদের তিন বছর ও গত মেয়াদের পাঁচ বছর-সহ আট বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপি-র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম। ধারাবাহিক ভাবে ৬.৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। ২০১৫-’১৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭.১১%। জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৫-’০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ ১৪৬৬ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২২.৪% শতাংশ।’’
২০০৫-’০৬ অর্থবছরে ১০.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের তুলনা করে হাসিনা বলেন, ‘‘২০১৫-’১৬ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাঁর সরকারের সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০০৯-এ আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিই, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।’’ শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘পাবনার রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।’’
শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে শিক্ষা খাতে উন্নয়নের তালিকাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের আমলে ৪৮টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন চালু হয়েছে। নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। আমাদের নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কাচপুর, ২য় মেঘনা এবং ২য় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। সরকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যাত্রী পরিবহণের জন্য ৪৫টি নৌযান নির্মাণ ও চালু করেছে। দু’টি যাত্রিবাহী জাহাজ ও চারটি সি-ট্রাক জাতীয় নৌপরিবহণে যুক্ত হয়েছে। নৌ-পথের নাব্যতা বৃদ্ধি করতে ১৪টি ড্রেজার কেনা হয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘গত ৮ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮২০০ ই-পোস্ট অফিস থেকে জনগণ ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ১৩ কোটির বেশি মোবাইল সিম ও ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় ৬ কোটি। চলতি বছরের মধ্যেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।’’ তিনি বলেন, ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ আন্তর্জাতিক ভাবে পুরস্কৃত হয়েছে।
তাঁর সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে হাসিনা বলেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমারও শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। এর ফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।’’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, তবে ধর্মান্ধ নয়। হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছেন। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ অব্যাহত আছে।’’
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি উল্লেখ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ত্রিশ মিনিট দীর্ঘ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের তিরিশ লাখ শহিদকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই— ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফ্টেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহোদর শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল-সহ সেই রাতের সব শহিদকেও স্মরণ করেন তিনি।
বর্তমান সরকারের তিন বছর হল, বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, কিন্তু...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy