বিশ্বব্যাঙ্ক বলছে বাংলাদেশকে দেখ। দেখে শেখ। কী ভাবে দারিদ্র দূর করতে হয়, উন্নয়নের ডানায় ভর করে। দেখছে সবাই। ছোট বড় সব দেশ বিস্ময়ে হতবাক। কৌতূহলের শেষ নেই উন্নত দেশগুলোরও। আট বছর আগেও যে দেশটাকে অক্টোপাসের মতো আটকে রেখেছিল বিরুদ্ধ শক্তি, সে দেশটার পালে হাওয়া লাগল কী করে। জবাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মানুষের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দিয়ে ভোট করানোর ব্যবস্থা বাতিল করেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাস্তা রুদ্ধ। দেশের উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছি। তাতে কাজ হয়েছে।” ধূসর অধ্যায়ের শেষে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইশারা।
গণতন্ত্র, শান্তি, সংহতি, সমৃদ্ধি- চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এর একটিকে বাদ দিয়ে আর একটি হবে না। কোনওটিকেই ভাঙতে দেবেন না হাসিনা। যারা ভাঙতে আসবে তারাই ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল সন্ত্রাস। তারাই ভেঙে চুরমার। সরীসৃপের মতো বিবরে আশ্রয় নিয়েছে। মাথা তোলার সাধ্য নেই। বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। চার বছর পর ২০২১-এ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। তার বিশ বছরে উন্নত দেশের মর্যাদা পাবে। প্রথম বিশ্ব কুর্নিশ করবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শক্তি এখন ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। শীর্ষ পাঁচটি দেশের সমান। গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি-তে বিশ্বে ৪৪তম, ক্রয় ক্ষমতায় ৩২তম। দারিদ্র্য, মুদ্রাস্ফীতি নিম্নমুখী। বাকি সবই ঊর্ধ্বমুখী। রফতানি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি, ক্রীড়া, নারীর ক্ষমতায়নে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি কমেছে বাংলাদেশে, বলছে সমীক্ষা
২০০৯-এ ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামি লিগ। টানা আট বছরের দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন হাসিনা। কী ছিল, আর কী হল। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ২০২১-এ পাবেন সবাই। ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। পাখা ঘুরবে। কম্পিউটার কথা বলবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পূর্ণতা পাবে। দরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের। বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। কয়লা, পরমাণু শক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বিদ্যুতের উপর জোর দিতে হচ্ছে বেশি। উন্নয়নের সবচেয়ে বড় শক্তি যে সেটাই। প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্সের রিপোর্ট বলছে, এই গতিতে চললে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ২০৩০-এ বিশ্বের ২৯তম আর ২০৫০-এ ২৩তম দেশের মর্যাদা পাবে।
উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চান হাসিনা। তিনি জানান, ২০১৪-র ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছি, সাড়া পাইনি। আশা করি ২০১৯-এর নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। নির্বাচন হবে ঠিক সময়ে। আওয়ামি লিগ যে এখন থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে তা স্পষ্ট। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি আর উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন, এখন নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার সময়। সব কিছু প্রবীণদের উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। দল এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। এটাই নতুন প্রজন্মকে তৈরি করার উপযুক্ত সময়। নতুনরা দলে দায়িত্ব নিতে শুরু করেছে। দলের বিগত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া ওবায়দুল কাদেরের উপর এখন অনেকটাই ভরসা করেন হাসিনা। দল এবং সরকার, দুই ক্ষেত্রই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিচ্ছেন তিনি। হাসিনা তনয় সজীব ওয়াজেদ জয় তো আছেনই। বেশি সামনে না এসে নেপথ্যে থেকে গুরুদায়িত্ব পালন করাটাই তাঁর বেশি পছন্দের। হাসিনার বোন শেখ রেহানার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকি ববি, হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলও দলীয় দায়িত্ব নিলে হাসিনার ভার অনেকটা কমতে পারে। তবে উত্তরসূরীরা রাজনীতিতে কে কতটা আগ্রহী তা এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy