নেত্রী: ভিড়ে ঠাসা বেগম খালেদা জিয়ার জনসভা। রবিবার ঢাকার সোহরাবর্দি উদ্যানে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তবে এ বার নির্বাচন কমিশনকে তিনি কিছু পরামর্শ দিলেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলেননি।
প্রায় তিন মাস লন্ডনে কাটিয়ে আসার পরে ঢাকায় প্রথম এই সমাবেশে জন সমাগম মাঠ ছাপিয়ে যায়। এর পরেও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন আটকে দিয়ে তাঁদের বহু সমর্থককে ঢাকায় আসতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই সমাবেশ নিয়ে অন্য একটি কারণে দেশবাসী স্বস্তিতে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, প্রায় দু’বছর পরে সোহরাবর্দি উদ্যানের এই সমাবেশ থেকে ফের ‘জ্বালাও-পোড়াও’ ধরনের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি নেত্রী। তবে নির্বাচনের ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবিতে তাঁর দল আন্দোলন করবে— এই ঘোষণা ছাড়া কোনও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির কথা খালেদা জানাননি। সরকারের সমালোচনাতেও এ বার সুর ছিল গঠনমূলক।
বস্তুত শেখ হাসিনা সরকারও চাইছে আগামী বছর দেশে সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিক। ২০১৪-র ৫ জানুয়ারি আগের নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বিএনপি ভোট বয়কট করে। তাতে এক রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেখ হাসিনার জোট ক্ষমতায় এলেও মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে আসেন। এই ঘটনায় সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনও কোনও মহল প্রশ্ন তুলেছিল। এ বারের নির্বাচন নিয়ে ফের যাতে সেই প্রশ্ন না-ওঠে, সে জন্য শাসক দল যথেষ্ঠ সতর্ক। বিএনপিকে ভোটের ময়দানে রাখতে তাদের সুরও নরম। লন্ডন থেকে ফিরে বেগম জিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে কক্সবাজার সফরের কর্মসূচি ঘোষণা করার পরে সরকার জানায়— প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাথাযথ প্রটোকল তাঁকে দেওয়া হবে। ঢাকার সোহরাবর্দি উদ্যানে এই সভা করার বিষয়েও সরকার বাধা দেওয়ার কৌশল নেয়নি।
কিন্তু নির্বাচনের বিষয়ে আগের কড়া অবস্থান ধরে রেখেই খালেদা জিয়া সভা থেকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন না। ইভিএম-এ ভোটের প্রস্তাবও তিনি খারিজ করে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভোটের সময়ে শুধু আইন-শৃঙ্খলা দেখতে সেনা নিয়োগ করলে হবে না, তাদের ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার’-ও দিতে হবে। খালেদা প্রতিশ্রুতি দেন, নির্বাচনে বিএনপি-জোট ক্ষমতায় এলে কোনও সরকারি কর্মকর্তার চাকরি যাবে না।
দেশে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ‘বেআইনি সরকার’ ক্ষমতা আসার পরে দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের নেতা-কর্মীদের সাজানো মামলায় হেনস্থা করা হচ্ছে। বহু কর্মীকে জেলে ভরা হয়েছে। বিএনপি-কে প্রকাশ্যে সভা-সমিতিও করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললে মানুষকে গুম করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হাকে পর্ষন্ত ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
সভার পরে শাসক দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বলেন, ‘‘বিএনপি নেত্রী নির্বাচনের সহায়ক সরকার বলতে কী বলছেন, তা স্পষ্ট নয়।’’ তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট আর কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সংবিধানে আর সে বিধান নেই। তিনি ঘোষণা করেন— সরকার সংবিধান মেনেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy