এই সেই পুরোহিত।
ঝিনাইদহে এক পুরোহিতকে হত্যার এক মাসের ব্যবধানে এ বার খুন হলেন আর এক মন্দিরের সেবায়েত। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ঝিনাইদহের মধুপুরের কাষ্টসাপরা মন্দিরের গোঁসাই শ্যামানন্দ দাস বাবাজিকে (৫০) কুপিয়ে খুন করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। শ্যামানন্দ দাস ঝিনাইদহ উপজেলার শ্রীশ্রী রাধামদন গোপাল বিগ্রহে (মঠ) কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার মুসুরিয়া গ্রামে। এই ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, সেবায়েতকে খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। তাই খুনিদের শীঘ্রই ধরা সম্ভব হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতি দিনের মতো এ দিন ভোরেও পুজোর জন্য ফুল তুলতে মঠ থেকে বের হয়েছিলেন শ্যামানন্দ। এ সময় শহরের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে এসে তিন ব্যক্তি শ্যামানন্দকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রাস্তার উপর ফেলে যায়। মোটরসাইকেল আরোহীদের মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। মাথায় ছিল টুপি। মাঝের জনের হাতে ছিল একটি রামদা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্বৃত্তেরা বাবাজিকে জখম করে পালিয়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, দুর্বৃত্তরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শ্যামানন্দকে গুরুতর ভাবে জখম করে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। মঠ পরিচালন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মণিকুমার রায় জানান, গত তিন বছর ধরে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শ্যামানন্দ দাস বাবাজি। পূজার্চনায় সব সময় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। তাঁর বাইরে যাওয়া-আসা খুব কম ছিল।
গত ৭ জুন ঝিনাইদহ জেলা সদরের করাতিপাড়া গ্রামের পুরোহিত আনন্দগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়কে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেফতার এনামুল হক নামে এক জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। অতি সম্প্রতি পাবনায় আর এক জন আশ্রম সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গত প্রায় দু’বছর ধরে বাংলাদেশে একাধিক সমমনা ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীকে এ ভাবেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সব ঘটনার পর প্রায় সব ক’টিতেই দায় স্বীকার করে বিবৃতি এসেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নামে, যার মধ্যে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদাও রয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, এ দু’টি জঙ্গি সংগঠনের কোনওটাই বাংলাদেশের এ সব হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনগুলিই মূলত এ সব হামলা করছে সরকারকে উত্তপ্ত করতে। এ সব সংগঠনের মধ্যে আনসার আল-ইসলামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১১ সালে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে সেনাবাহিনী থেকে কর্মচ্যুত মেজর জিয়াউল হক। মনিরুল ইসলামের দাবি, প্রাক্তন এই সেনা সদস্য ২০১১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন- ভুল করে চিনের দিকে ভয়ঙ্কর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে দিল তাইওয়ান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy