শি জিনপিং
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার বাংলাদেশে আসছেন। দুপুর পৌনে ১২টার নাগাদ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির প্রেসিডেন্ট ঢাকায় পৌঁছবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।
জিনপিং-এর এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর নয়। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার এই প্রথম ঢাকা সফর। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের মধ্য দিয়ে চিন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘একটি নতুন যুগের সূচনা’ করবে বলেই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানিয়েছে, ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতিতে চলা ‘কমিউনিস্ট’ চিনের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক সম্প্রসারণের অংশ হিসেবেই জিনপিং-এর এই সফর।
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বঙ্গপোসাগরের কোলের বাংলাদেশে চিনা প্রেসিডেন্টের এই সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেই মানছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের একাংশ।
এই সফরের কারণে, ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোনও প্রভাব পড়বে কি না সেই প্রসঙ্গও আলোচনায় এসেছে।
তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতিই বৈরিতা নয়— আমরা এই মূলনীতির প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ। আমরা এটাই মেনে চলি। কাজেই এখানে এ ধরনের কোনও সুযোগ নেই।’’
জিনপিং-এর এই সফরে ২৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও এ দিন জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রী। তিনি মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। অন্য দিকে অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, যে বিপুল ঋণচুক্তির আভাস দেওয়া হচ্ছে, তাতে অর্থনৈতিক কূটনীতিরও নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে এখান থেকে। ফলে এশিয়ায় চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর এ সফর ঘিরে আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কয়েক দিন আগেই ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন, তারা এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
জিনপিং ২০১০-এ প্রথম বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে চিনের নেতাদের মধ্যে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েননিয়েন ১৯৭৮ সালে এক বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৬ সালে আর এক বার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। এটাই ছিল সর্বশেষ কোনও চিনা রাষ্ট্রপতির শেষ বাংলাদেশ সফর।
অবশ্য স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তান আমলে এক বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট লি শাওছি। এ সবের মধ্যে দিয়ে চিন-বাংলাদেশ একটি দীর্ঘ বন্ধুত্বের পথরেখা তৈরি হয়। যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ভিত্তিও তৈরি হয়। চিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সফরকে ঘিরে সেই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ভিত্তিকেই আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা দেখছেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহল। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ প্রায় ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য চিন থেকে আমদানি করে। অন্য দিকে বাংলাদেশ দেশটিতে রপ্তানি করে প্রায় শত কোটি ডলারের পণ্য।
চিনা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ঢাকা এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। রাজধানীতে সাজ সাজ রব। বেশ কিছু এলাকায় বড় বড় করে চিনের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রাখা হয়েছে। পাশে শোভা পাচ্ছে দুই দেশের জাতীয় পতাকা। তাতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
দুই দিনের এই সফরের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জিনপিং বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তার পর ভারতের উদ্দেশে রওনা দেবেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। আর বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy