চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে! চোর চাই, চোর চাই! তস্কর অগোচরে থাকলে, যাকে পাই তাকে চোর সাজাই। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঘটনায় জড়িয়েছেন ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটর ষ্ট্রিট শাখার ম্যানেজার মায়া সান্তোষ দেগুইতো। তদন্তকারী দলের জেরায় তিনি জেরবার। বয়ান দিতে গিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছেন। যত না বলছেন তার চেয়ে বেশি কাঁদচ্ছেন। তাঁর কান্নাকে কখনই মায়া কান্না বলা যায় না। চাকরি খুইয়ে এমনিতেই অসহায়। মাথায় অপরাধের পাহাড় নিয়ে স্থবির। তাঁর সবিনয় নিবেদন, তাঁর মতো চুনোপুঁটিকে নাকাল করে কী লাভ। চুরির সুলুক সন্ধান পেতে হলে রাঘব বোয়ালদের ধরুন। তাঁকে বলির পাঁঠা করে যারা পার পেতে চাইছে তাদের ছাড়বেন না।
মায়া কিছুই করেননি এমন নয়। তিনি স্বীকার করেছেন, পরিণাম না বুঝেই ঘটনায় জড়িয়েছেন। কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে পেশায় এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। উপার্জনে স্বামীকে আরও বেশি সাহায্যের ইচ্ছেটা কাজ করেছে। উঁচু পদে যেতে চাওয়াটা অন্যায় নয়। না, নিশ্চয়ই নয়। সমস্যা অপরিচ্ছন্ন পথটা নিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভুল তথ্য দিয়ে পাঁচ ব্যবসায়ীকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করেছেন। তাদের মাধ্যমেই রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির পর ভাগ বাঁটোয়ারাতেও হাত বাড়িয়েছেন। এ অভিযোগ মায়া মেনেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অতিরিক্ত সংযোজন, অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে লেনদেনের পুরো কাজটাই করেছেন ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তানের নির্দেশে। যিনি প্রধান অভিযুক্ত কিম অংয়ের বন্ধু।
কিম যে সে লোক নন। তিনি ফিলিপিনসের ক্যাসিনোর জাংকেট অপারেটর। জুয়ার জাল বিছোতে তিনি অদ্বিতীয়। জন্ম চিনে হলেও কর্মক্ষেত্র ফিলিপিন্স। এত বড় চুরির ঘটনাতেও তিনি নিরুত্তাপে। অপরাধ অস্বীকার করে পার পেতে চাইছেন না। বরং টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বারবার। দু’দফায় কিছু টাকা বাংলাদেশকে ফেরতও দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ ৬১ হাজার ডলার ফিলিপিন্সের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছে জমা দিয়েছেন। আরও ৯৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেবেন।
কিম টাকা ফেরতের ব্যাপারে মুচলেকাও দিয়েছেন। তিনি শুধু একটু সময় চান, টাকাটা যোগাড় করতে। কিম জানিয়েছেন, বন্ধুদের কাছ থেকে টাকাটা ধার করা ছাড়া উপায় নেই, স্টক থেকেও কিছুটা পাওয়া যাবে। চুরি যাওয়া টাকার তুলনায় ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতির পরিমাণটা খুবই কম। বাকি টাকা কোথায় গেল কিম জানাননি। তাঁর মাথার ওপর যাঁরা আছেন, তাঁদের কি তিনি বাঁচাতে চাইছেন? কেঁচো খুঁড়তে যাতে কেউটে না বেরোয় সেদিকেই কি অতিরিক্ত সতর্কতা?
শেষ পর্যন্ত কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে এখনও স্পষ্ট নয়। টাকা ফেরতের সঙ্গে আসল অপরাধীদের চিহ্নিত করাটা আরও বেশি জরুরি। অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশের পুলিশ। তাদের দুটি দল ফিলিপিন্স আর শ্রীলঙ্কা গেছেন। ইন্টারপোলের সাহায্য নিচ্ছেন। অপরাধে বাংলাদেশের কারা যুক্ত তারও খোঁজ চলছে। তদন্তে তৎপরতার কসুর নেই। পাতা ধরে ডাল দিয়ে শেকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা। দেরি হয় হোক। অপরাধীরা পার না পেলেই হল।
আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy