বাঙালি-ইংরেজ ক্রিকেট যুদ্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশে। প্রথম টেস্ট হেরে গেলেও পরেরটায় জিতল বাঙালিরাই। খুলনার কিশোর মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্ধর্ষ বোলিং। পেশিশক্তিতে নয়, মগজাস্ত্রে। কুপোকাত ইংল্যান্ড। জয়ের উল্লাস চেপে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিরাজকে বাড়ি উপহার দিচ্ছেন। উৎফুল্ল কলকাতাও। মিরাজের শক্তির উৎসে কৌতূহল। সেও কি বিরাট কোহলির মতো স্যামন মাছ দিয়ে লাঞ্চ করে। না, ভাতের পাতে থাকে পদ্মার ইলিশ। গবেষণায় দোষ নেই। অবিস্মরণীয় প্রতিভার নিরন্তর চর্চা অনিবার্য। মিরাজ, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি। অভাব অভিযোগের ধাক্কা ঠেলে এগিয়েছে। আপন সৌকর্যে জয় ছিনিয়েছে। এ বার ক্রিকেট বিশ্বকে শাসনের অঙ্গীকার। মাত্র তিন মাসে বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ছবিটা। ১ জুলাই ঢাকার গুলশনে সন্ত্রাসী হামলায় সব আলো শুষে নিয়েছিল শঙ্কার মেঘ। এখন ঝকঝকে রোদ্দুর। সভ্যতাকে হারাতে চেয়েছিল যারা তারা গর্তে সেঁধিয়েছে। তাদের জঙ্গিপনায় মরচে ধরেছে। মগজ ধোলাইয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিল যে কিশোররা তারাও হয়ত আফশোস করছে। ভাবছে, হাতে বন্দুক না নিয়ে ব্যাট-বল তুলে নিলেই ভাল হত। মিরাজের মতো কৈশোরের দীপ্তিতে উজ্জ্বল হওয়ার সুযোগ থাকত।
আর যাতে সন্ত্রাসী কিশোর তৈরি না হয় সে দিকে কঠোর সতর্কতা সরকারের। নজর শিক্ষায়তনে। অঙ্কুরেই বিনাশী শক্তির বিনাশ। তালিকায় ঢাকার ১৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বাইরে তিনটি। তালিকার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট-ও রয়েছে। গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে দু'টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ন’টি মাদ্রাসা, তিনটি মসজিদের নাম।
শিক্ষা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যৌথ ভাবে পাহারায় রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অভিযুক্ত শিক্ষায়তনের কর্ণধার, শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে শিক্ষামন্ত্রক। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মত, শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা থাকে চার-পাঁচ ঘণ্টা। বাকি সময়টা কাটায় বাড়িতে বা বাইরে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। এ বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতা জরুরি। ছেলেমেয়েরা কোথায় কখন কী করছে না করছে তার খবর রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ১৫ দিনের বেশি যদি কোনও ছাত্রছাত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকে তার নামধাম থানাকে জানাতে হবে। নিখোঁজ ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বার করার দায়িত্ব পুলিশের। তদারকি করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
সবচেয়ে উদ্বেগ বুয়েটকে নিয়ে। তদন্তে জানা গেছে, তাদের ৭২ শতাংশ শিক্ষকই জামাত বা হিযবত তাহরীরের সদস্য। ছাত্রদের ওয়েবসাইট, ভিডিও ফুটেজ, জেহাদি বই, অডিও সিডি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করাটা তাঁদের কাজ। বুয়েটের উপাচার্য সইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগে যা হয়েছে তার সঙ্গে বর্তমানের তুলনা চলে না। যদি নতুন কোনও অভিযোগ জমা পড়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেব। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কিছু দিন আগেও জঙ্গিদের আঁতুরঘর ছিল। পরিস্থিতি বদলেছে। স্বচ্ছতা ফিরেছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকটাই নিশ্চিন্ত। যে সব স্কুল দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখা ছিল সেগুলো খুলেছে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সঙ্গে হাসি খেলায় মেতেছে। পা রাখছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে। সরকার নিশ্চিন্ত নয়। তারা জানে, সন্ত্রাস উইপোকার মতো, এক বার ধরলে চট করে ছাড়তে চায় না। সব কিছু কুড়ে কুড়ে খায়। সন্ত্রাস যাতে আর কখনও মাথা চাড়া না দেয় তার প্রতিষেধকের ব্যবস্থা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, কলকাতা-ঢাকা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy