*সূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক, ২০২২
ব্রেন ডেথ অর্থাৎ মস্তিস্কের মৃত্যু হয়ে গেলেও কি সেরে ওঠা সম্ভব?
কখনওই নয়। ব্রেন ডেথ থেকে সেরে ওঠা অসম্ভব। এটি আসলে কোমার মতো নয়। কোমায় থাকলে কোনও মানুষ নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও তাঁর মস্তিষ্ক সচল থাকে। ব্রেন ডেথ হয়ে গেলে মানুষের শরীরের পাশপাশি মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তাই সেই অবস্থা থেকে সেরে ওঠার আর কোনও সম্ভাবনা থাকে না।
যদি রোগীর পরিবার এক বার অঙ্গদানে সম্মতি দিয়ে দেন, তা হলে চিকিৎসকরা আর রোগীকে বাঁচানোর পুরোপুরি চেষ্টা করেন না?
কোনও রোগী ব্রেন ডেড হিসাবে ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পরেও চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ ভাবে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান সেই রোগীকে বাঁচানোর। তখন অন্য কারও বিষয় কখনওই প্রাধান্য পায় না। অঙ্গদান করার বিষয় নিয়ে তখনই ভাবনা চিন্তা করা হয় যখন কোনও রোগীকে পুরোপুরি মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
অঙ্গদাতাদের পরিবারকে কি হাসপাতালে বেশি টাকা দিতে হয়?
চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় ব্রেন ডেথ ঘোষণার পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবার যদি তাঁর অঙ্গদান করতে সম্মত হন, তা হলে দাতাকে কৃত্রিমভাবে সহায়তা করার জন্য যাবতীয় খরচ হাসপাতাল বহন করে।
ধর্মবিশেষে অঙ্গদান বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে কি নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়?
একেবারেই নয়। বরং কমবেশি সব ধর্মীয় বিশ্বাসেই অঙ্গদানকে একটি মহান ও মানবিক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকী বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় গুরু বা পন্ডিতরাও অঙ্গদানের পক্ষেই প্রচার চালিয়েছেন।
অঙ্গদান মানেই কি আমার শরীরকে মৃত্যুর পরে অহেতুক কাটাছেঁড়া করা হবে?
যে অঙ্গ দান করা হয় তা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অত্যন্ত নিপুণভাবে শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয়। এর জন্য বুকের ঠিক উপরের অংশ থেকে নাভি পর্যন্ত লম্বা করে কেটে নিয়ে সেই অঙ্গ বের করে নেওয়া হয়, যাতে মৃত ব্যক্তির শরীরের কোনও ক্ষতি না হয়। পাশাপাশি, দাহ করার সময় যেহেতু দাতার শরীর ঢাকা থাকে, সেহেতু কাটাছেঁড়ার কোনও চিহ্ন চোখে পড়ে না।
এক বার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিলে আমি কি পরবর্তী সময়ে মত পরিবর্তনের সুযোগ পাব?
অবশ্যই! দাতার কাছে সম্পূর্ণ সুযোগ থাকবে এই রেজিস্ট্রেশন বা লিপিবদ্ধ করা নাম কাটিয়ে নেওয়ার। যদিও ব্রেন ডেথ বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে আপনার পরিবারের পরবর্তী সদস্যরাই সেই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন যে আপনার অঙ্গ দান করা হবে কিনা।
আমি প্রৌঢ়। আমি কি দাতা হওয়ার বয়স পেরিয়ে এসেছি?
কোনও মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আরেকজন কখনওই বয়সে খুব ছোট বা বড় হন না। এই ক্ষেত্রে বয়সের কোনও মাপকাঠি নেই। আপনার পূর্ণ সম্মতি থাকলে এবং চিকিৎসার দিক থেকে সব প্রয়োজন মিলে গেলে আপনি যে কোনও বয়সেই অঙ্গদান করতে পারেন।
আমার শরীর এবং স্বাস্থ্য তেমন ভাল নয়। আমার অঙ্গদান করলে কি কারও লাভ হবে?
অঙ্গদান ও টিস্যুদানের জন্য যে কোনও মানুষই গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ এই কাজের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকরাই একমাত্র ঠিক করতে পারেন যে সেই মানুষটি অঙ্গদানের জন্য উপযুক্ত অবস্থায় রয়েছন কিনা।
তারকারা ও ধনী ব্যক্তিরা কি অঙ্গ গ্রহণের জন্য আগে গণ্য হবেন?
জাতীয় বা আঞ্চলিক স্তরে অঙ্গ গ্রহণের জন্য অপেক্ষা তালিকায় নাম লেখাতে কোনও ব্যক্তিকে নিজের যাবতীয় চিকিৎসার বিস্তারিত তথ্য জানাতে হয়। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ এলে সেই তালিকা অনুযায়ী জাতীয় বা আঞ্চলিক স্তরে গ্রহীতাদের প্রয়োজন। রক্ত ও টিস্যুর ধরন মিলিয়ে, উচ্চতা ও ওজনের ধারা দেখে নিয়ে, তবেই প্রতিস্থাপনের দিকে এগোনো হয়। এর সঙ্গে তারকাদের জৌলুস বা ধন-দৌলতের মাপকাঠির কোনও সম্পর্ক নেই।