Chinmoy Krishna Das

চিন্ময়কৃষ্ণকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ মামলায় গ্রেফতার করেছে ঢাকা! চট্টগ্রামের সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। চিন্ময়কৃষ্ণ তাঁদের অধিকারের দাবিতে কথা বলতেন। মিছিল, সভা, সমাবেশের আয়োজন করতেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫২
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আদালত তাঁর জামিনের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশের একাংশ। সংখ্যালঘুরা তাঁর মুক্তির দাবিতে পথে নেমেছেন। চলছে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ। কিন্তু কেন এই অশান্তি? কী অভিযোগ চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে?

Advertisement

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জন্ম চিন্ময়কৃষ্ণের। ছোট থেকেই তিনি সুবক্তা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরে বাংলাদেশের ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিন্ময়কৃষ্ণ ছিলেন ইসকনের চট্টগ্রাম ডিভিশনের সেক্রেটারি। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত করার দাবিতে গড়ে ওঠা মঞ্চ ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র করা হয়েছিল তাঁকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে কথা বলতেন তিনি। তাঁদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে চিন্ময়কৃষ্ণ সরব হয়েছেন বার বার।

গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তার পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। একাধিক হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। চট্টগ্রামে শুক্রবারও নতুন করে তিনটি মন্দিরে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে চিন্ময়ের প্রচার এবং কর্মসূচি বেড়ে গিয়েছিল। অক্টোবরে চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের নিয়ে তেমনই একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন চিন্ময়। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।

চিন্ময়কৃষ্ণ কী করেছিলেন বলে দাবি বাংলাদেশের অভিযোগকারীদের?

চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অক্টোবরে চট্টগ্রামের সমাবেশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে একটি গেরুয়া পতাকা তুলেছিলেন তিনি। তাতে জাতীয় পতাকার ‘অপমান’ হয়েছে বলে অভিযোগ। অক্টোবরের ওই সমাবেশের পর চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চট্টগ্রামের বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মহম্মদ ফিরোজ় খান। সেখানে তিনি জানান, বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা করেছেন চিন্ময়। অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি করে অশান্তি সৃষ্টিই চিন্ময়ের উদ্দেশ্য।

এর পরেও অবশ্য চট্টগ্রাম এবং রংপুরে একাধিক মিছিল, সভা ডেকেছেন চিন্ময়কৃষ্ণ। ২২ নভেম্বর রংপুরে তাঁর একটি সভায় বিপুল জমায়েতও হয়েছিল। ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন তিনি। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।

চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম এবং রংপুরে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। পথে নেমেছেন বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা। গত মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের সংঘর্ষে এক আইনজীবীর মৃত্যুও হয়েছে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। চিন্ময়কৃষ্ণকে সঠিক এবং নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ভারত। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। ভারতের এই বিবৃতিকে ভাল চোখে দেখছে না ঢাকা। তারা পাল্টা দাবি করেছে, ভারতের বিবৃতি আসলে ‘দ্বিচারিতা’। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের পাল্টা অভিযোগও করেছে তারা।

চিন্ময়কৃষ্ণ ইসকনের সদস্য ছিলেন। কয়েক মাস আগে সংগঠনের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে ইসকন। তাঁর গ্রেফতারির পর ইসকনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, চিন্ময়কৃষ্ণ তাঁদের কেউ নন। পরে অবশ্য ইসকন এ-ও জানিয়েছে, চিন্ময়ের অধিকারের দাবিকে তারা সমর্থন করে। চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের হাই কোর্টে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে চেয়ে মামলা হয়েছিল। তা খারিজ হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement