ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্স।
পেনসিলভেনিয়ার সভায় ভাষণের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল গুলি। তিনি প্রথম নন। আমেরিকায় ভোটের প্রচারে, রাজনীতিকদের জনসংযোগের সময় গুলি চলেছে আগেও। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সে দেশের চার-চার জন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরাও ছাড় পাননি। ট্রাম্পের সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাইপো রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। ভোটের এক বছর আগে জনসংযোগে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন জন এফ কেনেডি। রবার্ট জুনিয়রের বাবা রবার্ট এ কেনেডিও ছিলেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনিও প্রাণ হারিয়েছিলেন।
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রথম নিহত হন আব্রাহাম লিঙ্কন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে থিয়েটার দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্টকে মাথার পিছনে গুলি করা হয়েছিল। পরের দিন সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ছ’মাসের মাথায় গুলিবিদ্ধ হন জেমস গারফিল্ড। তিনি ছিলেন সে দেশের বিশতম প্রেসিডেন্ট। ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটনের একটি স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন। বুকে গুলি লাগে তাঁর। দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে একটি সভার পর লোকজনের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন উইলিয়াম ম্যাককিনলে। তখনই বুকে এসে লাগে দু’টি গুলি। ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় আমেরিকার ২৫তম প্রেসিডেন্টের।
১৯৩৩ সালে মায়ামিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। হুডখোলা গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে লক্ষ্য করে ছুটে আসে গুলি। যদিও বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসের কাছে ব্লেয়ার হাউসে ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান। সেই বাড়িতে ঢুকে গুলি চালান দু’জন। আমেরিকার ৩৩তম প্রেসিডেন্ট প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। এক আততায়ী এবং হোয়াইট হাউসের এক রক্ষী নিহত হয়েছিলেন।
১৯৬৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকার ডালাসে জনসংযোগের জন্য গিয়েছিলেন ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জনএফ কেনেডি। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জ্যাকিলন কেনেডি। হুডখোলা লিমুজিনে চড়ে জনসংযোগ করছিলেন তিনি। তাঁকে লক্ষ্য করে ছুটে আসে গুলি। সঙ্গে সঙ্গে পার্কল্যান্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, রোনাল্ড রিগান, জর্জ ডব্লিউ বুশকে লক্ষ্য করেও ছুটে এসেছিল গুলি। তাঁরা প্রাণে বেঁচেছিলেন।
ট্রাম্পের মতো এর আগে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের লক্ষ্য করেও ছোড়া হয়েছে গুলি। ১৯১২ সালে মিলওয়াউকিতে প্রচারে গিয়েছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট। সেখানে তাঁকে লক্ষ্য করে ছুটে আসে গুলি। জন কেনেডির ভাই রবার্ট এফ কেনেডি ছিলেন ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে। ১৯৬৮ সালে ক্যালিফর্নিয়া প্রাইমারি ভোটে জেতার পর ভাষণ দিয়ে লস এঞ্জেলেসের হোটেলে ফিরেছিলেন। সেখানে তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই রবার্টের ছেলে রবার্ট জুনিয়র জানান, ট্রাম্পের সাহস ‘অনুপ্রেরণা’ জোগায়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর পরিবারকে বার্তা পাঠিয়েছি। জানিয়েছি, তিনি সুস্থ রয়েছেন জেনে আমি কতটা স্বস্তি পেয়েছি। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’