US Presidential Election 2024

সুচেতনাদের হাতেই কি এ বারের ভোটের ফল

গত কয়েক বছরে পৃথিবীর অনেক দেশের নির্বাচনেই ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ কাজ করেছে, ক্ষমতাসীনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মানুষ।

Advertisement
সুদীপ নাথ
ডেট্রয়েট শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১৪
কমলা হ্যারিস (বাঁ দিকে), ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)।

কমলা হ্যারিস (বাঁ দিকে), ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। Sourced by the ABP

অতিমারিকে হারালেও সমাজ যেন আজ আরও অসুস্থ। দাবানলের মতো যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বহু দেশ। স্বৈরাচারী শাসকদের থাবা দেশের সীমা অতিক্রম করে রক্তাক্ত আঁচড় কাটছে অন্য দেশে। ঠিক এই সময়ে আমেরিকার নির্বাচন যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Advertisement

গত কয়েক বছরে পৃথিবীর অনেক দেশের নির্বাচনেই ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ কাজ করেছে, ক্ষমতাসীনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মানুষ। অতিমারি ও যুদ্ধে জর্জরিত দেশের
মানুষ মূল্যবৃদ্ধি বা উদ্বাস্তু-সমস্যার দায় চাপিয়েছে ক্ষমতায় থাকা দলের উপরে। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা-ভারাক্রান্ত মানুষ মানবতাবাদী উদারপন্থাকে সরিয়ে দিয়ে নিজের দেশের উন্নতি চেয়েছেন। সাধারণ মানুষের এই মনোভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিটি প্রচারসভায় বলছেন, ‘এই সরকার তোমাদের করের টাকা ইউক্রেনে, ইজ়রায়েলে পাঠিয়ে দিচ্ছে।’ নিউ ইয়র্ক, বস্টনের রাস্তায় গৃহহীন মানুষেরা প্রশ্ন তুলছেন, ‘এই সরকার বহিরাগত শরণার্থীদের জন্য হোটেল ভাড়া করছে আর আমাদের ঠিকানা রাজপথ?’ তাঁরাই বলছেন, ‘ট্রাম্পকে ফেরত চাই।’ এই সব আগুনের ফুলকির সদ্ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত মামলা এখন ইতিহাস। অনেকেই বলছেন, ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে সবার উন্নতি হবে।

কিন্তু এর বিপরীত স্বরও কি নেই? অবশ্যই আছে। দেশের নারীশক্তি জোট বেঁধেছে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে। তিনি প্রার্থী হতে রাজি হয়েই একটি অনলাইন বৈঠক করে অনুদান সংগ্রহের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব‍্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা চান দেশের মহিলারা, যা কনজ়ারভেটিভেরা মেনে নিতে পারছেন না। মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে উঠে আসা কমলা বলছেন যে মূলধনের ওপর যে মাত্রাতিরিক্ত লাভ বা ‘ক্যাপিটাল গেন’ হবে, তার উপরে আয়কর বসবে, মধ্যবিত্তের আয়কর কমবে। এই ধরনের নীতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত শহরের মানুষকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু আমেরিকার গ্রামের মানুষেরা, যাঁরা অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ, আজও মনে করেন এ দেশটা তাঁদের। কড়া অভিবাসন নীতি ও অন্য দেশকে সাহায্য করা বন্ধ হলেই তাঁদের উন্নতি হবে। তাঁরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবতে পারেন একজন ‘শক্তিশালী’ পুরুষকেই।

এই সামগ্রিক চিত্রের মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারেরা কোথায়?
সমীক্ষা বলছে এঁদের মধ্যে ৬১% হ্যারিসের সমর্থক, ৩২% ট্রাম্পের।
ভারতীয় সম্প্রদায়ের পারিবারিক গড় রোজগার বছরে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ডলার, যা এ দেশের সাধারণ মানুষের গড় আয়ের থেকে অনেকটাই বেশি। রোজগার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনই রিপাবলিকান সমর্থকদের সংখ্যাও বেড়েছে। যদিও ভারতীয়দের প্রধান সমস্যা অভিবাসন, কিন্তু এ সমস্যা যাঁদের, তাঁরা ভোট দেন না। নাগরিক হয়ে তাঁরা যখন ভোটের অধিকার পান তখন অনেকেই এইচ১বি এবং গ্রিন কার্ডের জন্য সুদীর্ঘ অপেক্ষার কথা ভুলে যান। অধিকাংশ ভারতীয় মহিলাই অবশ্য হ্যারিসের সমর্থক।

আমি যে প্রদেশে থাকি, সেই মিশিগান একটি ‘সুইং স্টেট’, অর্থাৎ, ভোটের ফলাফল যে ক’টি প্রদেশের উপরে নির্ভর করে মিশিগান তার মধ্যে অন্যতম। কাকে ভোট দেবেন এখানকার মানুষ? বাইডেন-হ্যারিসের ইজ়রায়েল নীতিতে বিরক্ত অনেক মুসলিমই ঝুঁকছেন ট্রাম্পের দিকে। কিছু আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষ হাল্কা সুরে বলছেন, ট্রাম্প তাঁদের মতো, কারণ তিনিও গুলি খেয়েছেন। তবে অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গের মতে, ট্রাম্প নন, হ্যারিসই তাঁদের কথা ভাবছেন। তরুণ ভোটারদের একাংশ উদারপন্থী হ্যারিসের পক্ষে, কিন্তু বর্তমান সরকারের ইজ়রায়েল নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা বিরক্ত হয়ে একটি তৃতীয় দল, গ্রিন পার্টিকে সমর্থন করতে চাইছেন। শিক্ষিত মানুষরা উদারনীতি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হলেও অনেকেই বলছেন, মিশিগানে ফলের চাবিকাঠি গ্রামের শ্বেতাঙ্গ মানুষের হাতে।

সত‍্যিকারের চাবিকাঠি কি এ বার বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সুচেতনাদের হাতেই? উদারপন্থী নারীদের ভোটই কি শেষ পর্যন্ত হ্যারিসকে এগিয়ে দেবে?

আরও পড়ুন
Advertisement