NIH

এনআইএইচ-এর শীর্ষে বঙ্গতনয় জয়কে বাছলেন ট্রাম্প

বঙ্গসন্তান জয় ভট্টাচার্যের উপরে আস্থা রাখলেন আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক জল্পনা সত্যি করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর পরবর্তী ডিরেক্টর হিসেবে জয়েরই নাম মনোনীত করলেন তিনি।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ডিসি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৮
আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

তিনি মেডিসিনের এমডি। তিনি অর্থনীতিবিদও। কোভিড অতিমারির সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তিনি নিন্দিত ও নন্দিত। লকডাউন, বাধ্যতামূলক কোভিড টিকাকরণের মতো সরকারি নীতির বিরোধিতা করায় এক সময় টুইটারের মতো সমাজমাধ্যমে তাঁর প্রোফাইল নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সব বিতর্ক সরিয়ে নতুন জমানায় সেই বঙ্গসন্তান জয় ভট্টাচার্যের উপরে আস্থা রাখলেন আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক জল্পনা সত্যি করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর পরবর্তী ডিরেক্টর হিসেবে জয়েরই নাম মনোনীত করলেন তিনি।

Advertisement

এনআইএইচ হল বিশ্বের বৃহত্তম সরকার পোষিত বায়োমেডিক্যাল গবেষণা বিষয়ক সংস্থা। কোন কোন গবেষককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, তা ঠিক করার পাশাপাশি ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রেও ওই সংস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মেরিল্যান্ড ক্যাম্পাসে ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টিও দেখভাল করে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের এই সংস্থা। আগামী দিনে এনআইএইচ-এর পরিচালক হিসেবে জয় ২৭টি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্ব নেবেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণা চলবে তাঁর তত্ত্বাবধানে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা হোক বা অতিমারির মোকাবিলায় তৈরি টিকা, নতুন ওষুধ আবিষ্কার এবং তার কার্যকারিতা যাচাই, সব কিছুই হবে জয়ের নজরদারিতে,তাঁর অনুমোদনে। এনআইএইচ-এর অধিকর্তা হিসেবে জয়ের নাম মনোনীত করার পরে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘গবেষণায় এনআইএইচ-এর স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে কেনেডির (রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র) সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করবেন জয়।’ পরে এক্স হ্যান্ডলে ধন্যবাদ জানিয়ে জয় লেখেন, ‘মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে আমেরিকার গবেষণাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনর্গঠন করা হবে। বিজ্ঞান এবং তার গবেষণার অগ্রগতির মাধ্যমে আমেরিকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনব।’

জয়ের জন্ম ১৯৬৮ সালে, কলকাতায়। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মেডিসিনে এবং ২০০০ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। ৫৬ বছরের এই চিকিৎসক-অর্থনীতিবিদ বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক। স্ট্যানফোর্ডে তিনি অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণায় নীতি নির্ধারণের দায়িত্বেও রয়েছেন। ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনমিক্স রিসার্চের গবেষক তিনি। স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চ, স্ট্যানফোর্ড ফ্রিম্যান স্পগলি ইনস্টিটিউট এবং হুভার ইনস্টিটিউটে তিনি সিনিয়র ফেলো। স্ট্যানফোর্ডের সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড ইকনমিকস অব হেলথ অ্যান্ড এজিং-র ডিরেক্টর জয়। তাঁর গবেষণার কেন্দ্রে রয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষেরা। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্য এবং সেই ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের ভূমিকা নিয়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণা রয়েছে।

করোনার সময়ে জো বাইডেন প্রশাসনের কাজকর্ম নিয়ে একাধিক সমালোচনামূলক লেখা লিখেছেন জয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে তাঁর লেখা ‘গ্রেট ব্যারিংটন ডিক্লারেশন’ সমর্থন করেছিলেন রিপাবলিকান রাজনীতিকেরা। এনআইএইচ-এর অধীনে থাকা ২৭টি সংস্থার ক্ষমতা খর্ব করার সুপারিশও করেছিলেন এই বাঙালি চিকিৎসক। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউচির নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন জয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অতিমারি সঙ্কটে জো বাইডেন প্রশাসনের অধীন নানা সংস্থার অব্যবস্থাপনা নিয়েও। তার পরেই ফাউচি-সহ এনআইএইচের বিভিন্ন আধিকারিকের নানা সিদ্ধান্ত ঘিরে হইচই শুরু হয় আমেরিকান রাজনীতির অলিন্দে।

তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, জয়ের কাজ মূলত অর্থনীতির, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তিনি করবেনটা কী? এর আগে ওই পদে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান বিষয়ে কাজ বা দক্ষতা সর্বজনবিজিত। জয়ের তা নেই অথচ তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থার উপরে ছড়ি ঘোরাবেন। তার উপরকোভিডের সময়ে লকডাউনে আপত্তিজানান তিনি। এই সব প্রশ্ন অবশ্য গুরুত্ব পাচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসনে।

চলতি মাসের গোড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের নাম ঘোষণা করেন ট্রাম্প। ফলে এই জমানায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতরের শীর্ষ আধিকারিক ও তাঁদের সহযোগী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য দায়িত্ব পালনকরছেন কেনেডি। কেনেডির টিকাকরণবিরোধী মনোভাব আমেরিকানদের অজানা নয়। কোভিডের সময়ে বাধ্যতামূলক টিকাকরণ ও লকডাউনেরকড়া সমালোচনা করে জয়ও চর্চায় এসেছিলেন । সম্প্রতি বিভিন্ন স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে জয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কেনেডি। সূত্রের খবর, সেখানে এনআইএইচ-কে আরও নানা উদ্ভাবনী গবেষণায় অর্থ সাহায্যের পরামর্শ দিয়েছেন জয়। দীর্ঘদিন কাজ করা বেশ কিছু আধিকারিকের প্রভাব কমানোর কথাও কেনেডিকে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement