২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।
আকাশের বুকে একটা ছোট্ট বিন্দু। সময় যত গড়াতে থাকে সেই বিন্দু ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের ড্রাগন যান নেমে এল সমুদ্রবক্ষে। সেই মহাকাশযানে ছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে ওই যান থেকে খুলে যায় একে একে চারটি প্যারাশুট। তখন ওই যানের গতি খুবই কম। ভাসতে ভাসতে নেমে আসে ফ্লরিডায় অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে।
প্রতীক্ষার অবসান। ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতারা। তাঁদের প্রথমেই ‘স্বাগত’ জানাল ডলফিনেরা। সমুদ্রের বুকে ভাসমান স্পেসএক্সের মহাকাশযানের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল কয়েকটি ডলফিনকে। কখনও জলের নীচ থেকে মাথা উঁচু করে দেখছিল যানটিকে। আবার পরমুহূর্তেই ডুব দিচ্ছিল তারা।
সুনীতাদের সমুদ্রবক্ষ থেকে ফিরিয়ে আনতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ। সুনীতাদের ক্যাপসুল এসে জুড়ে যায় ওই জাহাজের সঙ্গে। তার পর মহাকাশচারীদের ক্যাপসুলকে হাইড্রলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজে। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলে। ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৪টে ২২ মিনিট নাগাদ প্রথমে ক্যাপসুলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার পর একে একে নভশ্চর আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ, সুনীতা এবং বুচকে বার করে আনা হয়।
ক্যাপসুল থেকে বেরোনোর সময় সুনীতাদের মুখে ছিল প্রশান্তির হাসি। তার পর স্ট্রেচারে চাপিয়ে তাঁদের তোলা হয় জাহাজে। সেই জাহাজ এসে থামে ফ্লরিডার উপকূলে। সেখানে সুনীতাদের জন্য অপেক্ষা করছিল বিশেষ গাড়ি। তাতে চাপিয়েই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হিউস্টন জনসন স্পেস সেন্টারে। পৃথিবীতে ফিরলেও এখনই তাঁরা পরিবার বা অন্য কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। থাকতে হবে পর্যবেক্ষণে। অন্তত ৪৫ দিন বিশ্রাম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হবে সুনীতাদের।
গত বছর ৫ জুন মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতারা। কথা ছিল আট দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন তাঁরা। মূলত, অতিথি হয়েই মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু তখনও কেউ ভাবেননি আট দিনের সফর শেষ হবে ন’মাসে! তবে মহাকাশযানে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বার বার পিছোতে থাকে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরার তারিখ। অবশেষে বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ (ভারতীয় সময়) সুনীতারা ফিরলেন পৃথিবীতে।