নাহিদ ইসলাম। —ফাইল ছবি।
দায়িত্ব নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দফতরে ইস্তফা পাঠিয়েছেন তিনি। আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে নতুন দলের নাম ঘোষণা হওয়ার কথা। সেই দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে চলেছেন তিনি।
গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। যে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রমে তাঁর নেতৃত্বেই এক দফা দাবিতে পথে নামেন পড়ুয়ারা। পাশে দাঁড়ান বাংলাদেশের বহু সাধারণ মানুষ। যার জেরে ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং শেষে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর পর ৯ অগস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ।
আগামী শুক্রবার পথচলা শুরু করবে নতুন দল। সেই দলের বড় অংশই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতা ছিলেন। তা ছাড়া, জামায়াত-ই-ইসলামির (জামাত নামে যা পরিচিত) শিক্ষার্থী সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের অনেকেও যোগ দিচ্ছেন নতুন দলে। দলের সাধারণ সচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটি সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মুখ্য সংগঠক এবং মুখপাত্র পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লা। সারজিস জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গেও যুক্ত।
প্রাথমিক ভাবে চারটি শীর্ষপদ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তী সময় ‘সমঝোতার’ ভিত্তিতে নতুন দলে আরও দু’টি পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নামে দু’টি পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর জানাচ্ছে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলি আহসান জোনায়েদের (ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাক্তন সভাপতি) নাম বিবেচনায় আছে। আর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি।
নাহিদের জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায়। বাবা শিক্ষক। বাড়িতে স্ত্রী, মা এবং ছোট এক ভাই রয়েছে তাঁর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। নাহিদের ঘনিষ্ঠেরা বলেন, বরাবরই তিনি মানুষের অধিকার নিয়ে সরব হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝেই নাহিদকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, ১৯ জুলাই সবুজবাগে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে তাঁকে ‘অপহরণ’ করেন ২৫ জন। নাহিদের দাবি ছিল, ‘অপহরণকারী’রা ছিলেন হাসিনার ‘বিশেষ বাহিনীর’ সদস্য। বস্তুত, ওই ঘটনার পরেই তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল। যদিও এখনও পর্যন্ত নাহিদের সেই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।