কলম্বোয় উন্মত্ত জনতা। ফাইল চিত্র।
অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেরবার শ্রীলঙ্কা। সেই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দ্বীপরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে রাজনৈতিক সঙ্কটও। গত কাল গভীর রাতেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে একসঙ্গে ইস্তফা পত্র জমা দেন দেশের ২৬ জন মন্ত্রী। আজ দিনভর সেই টানাপড়েনই অব্যাহত থাকল।
২৬ জন মন্ত্রীর ইস্তফা তিনি মেনে নিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে। তবে আজ সকালে নতুন করে চার জন মন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট। তাঁর বক্তব্য, এই চরম অরাজকতার মধ্যেও পার্লামেন্টের কাজ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য কিছু মন্ত্রীকে নিজের দায়িত্ব পালন করতেই হবে। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকেও আজ সকালে ক্যাবিনেটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট। এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার এই গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্কট গণতান্ত্রিক উপায়েই মেটাত হবে’। তবে বিরোধীরা তাঁর ডাকে কতটা সাড়া দেবেন, তা আজ রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
যে চার জন মন্ত্রী আজ নতুন ভাবে শপথ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলি সাব্রি। গত কাল রাত পর্যন্ত যিনি বিচারমন্ত্রী ছিলেন, আজ তাঁকেই অর্থমন্ত্রীর পদে নিয়োগ করেছেন রাজাপক্ষে। নিজের ভাই ব্যাসিল রাজাপক্ষকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে আজ সরিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি জিএল পেইরিসকেই ফের বিদেশমন্ত্রীর পদে আজ নিযুক্ত করা হয়েছে। হাউস লিডার দীনেশ গুণবর্ধনে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্য হুইপ জনস্টন ফার্নান্ডো হাইওয়ে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আজ।
সরকারের জোট শরিক ১১টি দলের নেতা উদয় গাম্মানপিলা অবশ্য রাজাপক্ষের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, এই চার নতুন মন্ত্রীর শপথ আসলে ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’ পরিবেশনের সমান। এর ফলে কোনও সঙ্কটেরই সমাধান হওয়ার নয়।
আজ সকালে শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর অজিত নেভার্ড সেব্রাল নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবল বিরোধী ছিলেন তিনি। সাকলে একটি টুইটের মাধ্যমে তিনি জানান, গত কাল যে ২৬ জন মন্ত্রী এক যোগে পদত্যাগ করেছেন, নৈতিক ভাবে তাকে সমর্থন করেই গভর্নরের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন তিনি।
তবে রাজাপক্ষে সরকারও জানিয়ে দিয়েছিল, গভর্নর ইস্তফা দিলেও নির্ধারিত সূচি মেনে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক আজ তাদের বোর্ডের বৈঠক সারবে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন সদ্য নিযুক্ত অর্থমন্ত্রী আলি সাব্রি। গত শনিবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার কার্ফু জারি করেছিল প্রশাসন। আজ সকালে তা তুলে দেওয়া হয়। তবে দেশে জরুরি অবস্থা এখনও জারি আছে বলে জানিয়েছে রাজাপক্ষে সরকার। গত কাল কার্ফু উপেক্ষা করে কলম্বোয় রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হয়েছিলেন শ’য়ে শ’য়ে সাধারণ মানুষ। আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাড়ির সামনে জড়ো হন হাজার দু’য়েক বিক্ষোভকারী। উন্মত্ত জনতাকে সরাতে আজও ফের কাঁদানে গ্যাস চালাতে হয়েছে পুলিশকে। প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের ছেলের লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কিছু মানুষ। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরাও। বিক্ষোভকারীদের ওই দলটি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের পাশেই রয়েছে তারা।