পুলিশ আন্দোলনকারী সংঘর্ষে নিহতদের পরিজনের কান্না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: রয়টার্স।
পরিস্থিতি নিয়ে গত কাল আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনেই রক্তাক্ত হল বাংলাদেশ। সারা দিনে আন্দোলনকারী এবং আওয়ামী লীগ ও বাহিনীর সংঘর্ষে দেশে ১৪ পুলিশ-সহ ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকা-সহ সব শহরে কার্ফু জারি করেছে শেখ হাসিনা সরকার। বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট, ফোর জি পরিষেবা, সমাজমাধ্যম। ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের ছুটি। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। উল্টে আন্দোলনকারী মঞ্চ ‘ঢাকা চলো’ (মার্চ টু ঢাকা) কমর্সূচির দিন এগিয়ে এনেছে। ৬ অগস্টের পরিবর্তে ৫ অগস্ট, অর্থাৎ আগামিকাল ওই কর্মসূচি পালন করা হবে, জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। দেশবাসীকে কার্ফু মেনে চলতে অনুরোধ করেছে সেনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, যাঁরা নাশকতা করছেন তাঁরা ছাত্র নন, জঙ্গি। তাঁদের দমন করতে দেশবাসীর সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের বাংলাদেশে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় এবং ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলেছে দিল্লি। সরকারি সূত্রে খবর, আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ এখন জামাতের হাতে চলে গিয়েছে বলে দিল্লিকে জানিয়েছে ঢাকা। জামাতের ছাত্র সংগঠনের পিছনে ঢাকার পাকিস্তানি হাইকমিশনের মদত রয়েছে বলেও জানিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার।
আজ সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সমাবেশে শোনা গিয়েছে নজরুল, দ্বিজেন্দ্রগীতি। হাসিনা সরকারের অপসারণের দাবি সামনে রেখে চলছে আন্দোলন। পাল্টা রাস্তায় নেমেছিল আওয়ামী লীগ।
কিছু ক্ষণ পর থেকেই খবর আসতে শুরু করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বাহিনীর সংঘর্ষের। একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শহরের নানা প্রান্ত থেকে গুলিবিদ্ধ ৫৬ জনকে নিয়ে আসা হয়। পরে চার জনের দেহ শহিদ মিনারে নিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দেহ সামনে রেখে ফের সরকার-বিরোধী স্লোগান দেন তাঁরা। রাজধানীতে মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন, জানিয়েছে পুলিশ।
অন্য দিকে, নরসিংদীর মাধবদীতে আজ পিটিয়ে খুন করা হয়েছে শাসক আওয়ামী লীগের ছয় স্থানীয় নেতাকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, আজ দুপুর ১২টা নাগাদ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাঁদের সরে যেতে বলেন। না সরায় আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তাতে আহত হন দু’জন। তখন বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপরে চড়াও হন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। বিএনপি কর্মীরা তাঁদের নেতাদের পিটিয়ে খুন করেছেন।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় জনতার হামলায় ১৩ জন পুলিশ নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে হাজার খানেক লোক থানায় অবস্থান শুরু করেন। পরে কয়েকশো লোক থানায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। নিহত ১৩ জন পুলিশের মধ্যে রয়েছেন এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রজ্জাকও।