সোমবার সিরিয়ার রাস্তায় সন্তানকে কোলে নিয়ে নেমেছেন মা। খুলেছে স্কুলগুলিও। ছবি: রয়টার্স।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয় সিরিয়ায়। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা শুরু করেছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সাক্ষী থাকা পশ্চিম এশিয়ার দেশটি। সিরিয়ার স্কুলগুলি পুনরায় খুলে গিয়েছে। শুরু হয়েছে পঠনপাঠন। আবারও স্কুলমুখী হতে শুরু করেছে সে দেশের খুদে পড়ুয়ারা। রবিবার সিরিয়ার বিভিন্ন গির্জাতেও সমবেত প্রার্থনায় যোগ দিতে দেখা গিয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের। এক দিকে যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিয়ার জনজীবন, তখন অন্য দিক থেকে সিরিয়ার উপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলি সেনা।
তবে ইজ়রায়েলের সঙ্গে কোনও সংঘাতের পথে এগোতে চাইছেন না সিরিয়া থেকে বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিদ্রোহীরা, সে কথা আগেই জানিয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি। তাঁরা চাইছেন সিরিয়া পুনর্গঠন করতে। বস্তুত, প্রায় তেরো বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার পরিস্থিতি এখন মোটেই সুখকর নয়। পাশাপাশি, বাশার আমলের সিরিয়ান সেনা কিছু দিন আগে পর্যন্তও বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করেছে। এই আবহে নতুন করে কোনও বহির্রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে এগোনোর পরিস্থিতিতেও নেই সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
এই অবস্থায় ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের তুলনায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজাই সিরিয়ার জন্য শ্রেয় বলে মনে করছেন জোলানি। তাই বাশার-পতনের পর সিরিয়ার পুনর্গঠনের দিকে জোর দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। বাশারের আমলে সিরিয়ার এক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার চেষ্টা হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্রোহীরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির নজর রয়েছে সিরিয়ার দিকে। বর্তমান পরিস্থিতি সিরিয়ায় ‘মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করার ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ডের মতে, এই সময়ে ন্যায়বিচার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিশোধ নয়। কেউ আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন বুঝতে পারলে তাঁর উপর যাতে হামলা না করা হয়, সেই অনুরোধও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
নতুন ক্ষমতায় আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য দেশগুলির কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, সে দিকেও নজর রয়েছে। আমেরিকা সিরিয়ার পরিস্থিতির জন্য বাশারকেই দায়ী করেছে। সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার জন্য সিরিয়ার সব গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বাশার পতনের পর চিনও জানিয়েছে, সিরিয়ায় ফের স্থিতাবস্থা ফিরবে বলে আশা করছে তারা। বাশারের অন্যতম ‘মিত্ররাষ্ট্র’ ইরান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও জানিয়েছে, তাঁরা সিরিয়ার সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’ আগ্রহী। নজর রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মতে, স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ পেয়েছে সিরিয়া।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা জোলানি সরাসরি ক্ষমতা হাতে নেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মহম্মদ আল-বাশিরকে নিয়োগ করেছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাশারের পতনের পর নতুন ইসলামিক গোষ্ঠীর কী ভূমিকা থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন সে দেশে বসবাসকারী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। তবে রবিবার দামাস্কাস সংলগ্ন বাব তৌমার গির্জায় ভিড় করতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। সমবেত প্রার্থনায় যোগ দেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার-পতনের পর সে দেশের খ্রিস্টানদের রবিবারের সমবেত প্রার্থনায় যোগদান এই প্রথম।