তৈল শোধনাগারের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। ইউক্রেনের ডনেৎস্কের কাছে। রয়টার্স
রাশিয়ার হাত থেকে পূর্ব ইউক্রেন ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সরকার। ডনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জ়াপোরিজিয়া— এই চার অঞ্চল দখল করে রেখেছে মস্কো। এলাকাগুলি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া ইউক্রেনীয় বাহিনী। কাল গভীর রাতের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জানালেন,তাঁদের আক্রমণে পর্যুদস্ত রুশসেনা। ফলে শীঘ্রই ‘ভাল খবর’ মিলবে। পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিষয়ে আশাবাদী প্রেসিডেন্ট।
সাংবাদিক বৈঠকে জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ভাল খবর মিলবে শীঘ্রই। যদিও এর বেশি কিছুই ভেঙে বলেননি তিনি। এ দিকে খেরসনে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, বারুদের ঝড় উঠবে। তাঁদের অনুমান, খেরসনে প্রবল সংঘর্ষ শুরু হওয়ার অপেক্ষা। হয়তো এমন যুদ্ধ গত আট মাসে দেখেনি ইউক্রেন। এই যুদ্ধই হয়তো স্থির করে দেবে, কার হাতে থাকবে খেরসন। রাশিয়ানা ইউক্রেন!
ডনেৎস্কের গা ঘেঁষে অ্যাভডিভকা এবং বাখমুতে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। জ়েলেনস্কি নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘‘রুশ কম্যান্ড যে আক্রোশে কতটা উন্মাদ হয়ে উঠেছে, তা এই সব অঞ্চলে গেলে বোঝা যায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, ওরা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিজেদের সব শক্তি দিয়ে বিধ্বংসী সব অস্ত্র ব্যবহার করে চলেছে।’’ স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক যাওয়ার পথে পড়ে বাখমুত। সব ক’টি জায়গাই ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাখমুত দখল করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মস্কোর বাহিনী। কিন্তু এখনও তারা ব্যর্থ। জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, বাখমুতে পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনও বদল ঘটেনি। তবে ডনেৎস্ক থেকে বাখমুত ও অ্যাভডিভকা অভিমুখে যুদ্ধ বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে।
নিপ্রো নদী বরাবর দক্ষিণের দিকে এগোচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে খুব ধীর গতিতে। ইতিমধ্যে খেরসন থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মস্কোর এক কর্তার দাবি, ৭০ হাজার মানুষ খেরসন ছেড়ে অন্যত্রচলে গিয়েছে।
অন্য দিকে, কিভ ও অন্যান্য অঞ্চলে ইরানের তৈরি ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। একের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছে মস্কো। এর ফলে ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্ত অন্ধকারে ডুবে। শীত ক্রমশ বাড়ছে। ঘর গরম রাখা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য বিদ্যুৎ নেই সরকারের ভান্ডারে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসন অনুরোধ জানিয়েছে, যতটা সম্ভব কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়া ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করেছে বলেইউক্রেন অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু ইরান এই অভিযোগ মানতে নারাজ। ইরানের বিদেশ মন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘‘আমরা গোড়া থেকেই যুদ্ধের বিরোধিতা করে এসেছি। এখনও করছি। আমরা কোনও পক্ষকেই অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করব না। আমরা ইউক্রেনীয় আধিকারিকদের জানিয়েছি, যদি ওদের কাছে কোনও প্রমাণথাকে দেখাক। প্রমাণ করুক যে ইউক্রেনের যুদ্ধে ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।’’ তিনি আরও ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ইরান ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তারা রাশিয়াকে কোনও অস্ত্র ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়নি, তাদের হাতে অস্ত্রতুলেও দেয়নি।