(বাঁ দিক থেকে) অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা । শনিবার আমেরিকায় কোয়াড সম্মেলনের পরে। ছবি: এক্স।
শনিবার আমেরিকার ডেলাওয়ারে চতুর্দেশীয় অক্ষের (কোয়াড) বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠকে বিশ্বের নানা প্রান্তে সংঘাতের আবহে কোয়াডের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আলাদা করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিসের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মোদী। কোয়াডের আগামী বছরের সম্মেলন ভারতে হওয়ার কথা। আয়োজক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে সেই সম্মেলনের নেতৃত্ব দেবেন মোদীই।
কোয়াড সম্মেলনের ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে আমাদের এই বৈঠক হচ্ছে, যখন বিশ্বের নানা প্রান্তে উদ্বেগ, উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের বাতাবরণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোয়াড একসঙ্গে মিলে কাজ করছে মানবতার স্বার্থে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে। বিশ্বশান্তির জন্য কোয়াড তাই গুরুত্বপূর্ণ।’’ মোদী জানান, কোয়াড কারও বিরুদ্ধে নয়। তবে এই চতুর্দেশীয় সংগঠন আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলে, সব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে এবং সমস্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সকলের অগ্রাধিকার ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাধীন, মুক্ত, সমৃদ্ধিমূলক বাতাবরণ বজায় রাখা। সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।’’ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কোয়াড ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে বলেও জানান মোদী।
কোয়াডের সম্মেলনে বাইডেনকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন মোদী। তাঁর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কোয়াডের সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত। ২০২১ সালে কোয়াডের প্রথম সম্মেলন আপনার নেতৃত্বেই আয়োজিত হয়েছিল। কত কম সময়ের মধ্যে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছি। এতে আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াডে এই অবদানের জন্য আমি অন্তর থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
উল্লেখ্য, কোয়াডের বৈঠকে যোগ দিতে শনিবারই আমেরিকায় গিয়েছেন মোদী। তিন দিনের সফরে আরও অনেক কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। শনিবার বাইডেনের বাড়িতেও আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পৃথক ভাবে তাঁর আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী এ বার আমেরিকার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। রিপাবলিকানদের প্রার্থী হিসাবে এ বার লড়বেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে বর্তমানে আমেরিকা একটি রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে উপস্থিত। সেই আবহে কোয়াডের বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
আমেরিকায় গিয়ে কোয়াডের সদস্য রাষ্ট্রগুলির নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন মোদী। সে প্রসঙ্গে রবিবার বলেছেন, ‘‘কোয়াডের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে দেখা করে আমার খুব ভাল লাগছে। আমাদের বৈঠক সফল হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের উন্নতির জন্য আগামী দিনে কোয়াড কী ভাবে কাজ চালিয়ে যাবে, সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’’
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে মোদী বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কিশিদার দেখা হল। খুব ভাল বৈঠক হয়েছে আমাদের। প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, সেমিকন্ডাকটর, প্রতিরক্ষার মতো বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ভারত এবং জাপানের মধ্যেকার দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক বন্ধন বিশ্বের উন্নয়নে কার্যকর হবে।’’ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মোদী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আলবানিসের সঙ্গেও খুব ভাল বৈঠক হয়েছে আমার। বাণিজ্য, নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চায় আমরা জোর দিয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’’