Pahalgam Attack

‘আমাদের জল না এলে সিন্ধু নদ দিয়ে ওদের রক্ত বইবে’! মোদীর কোন চালে চাপে পড়ে ভুট্টোর হুমকি?

পহেলগাঁও কাণ্ডের পরেই ভারত ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের কথা। এমন সিদ্ধান্ত ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৭

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সিন্ধু জলবণ্টন স্থগিত নিয়ে এ বার ভারতকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের শাসক জোটের সহযোগী পাকিস্তান পিপল্‌স পার্টি (পিপিপি)-র নেতা বিলাবল ভুট্টো জারদারি। নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ উত্তেজনার আবহে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিন্ধু আমাদের। হয় সিন্ধু নদ দিয়ে আমাদের প্রাপ্য জল আসবে, নয়তো সিন্ধু দিয়ে ওদের (ভারতীয়) রক্ত বইবে।’’

Advertisement

পহেলগাঁও কাণ্ডের পরেই ভারত ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা। এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে বলে ভারতকে বৃহস্পতিবার পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার। কিন্তু শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ইসলামাবাদকে সিন্ধু জল চুক্তি ‘আপাতত স্থগিতের’ কথা জানিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলপ্রবাহ সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না।

কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী সিআর পাতিলও পাকিস্তানকে সিন্ধুর ‘এক বিন্দু জল না দেওয়া’র ঘোষণা করেছেন শুক্রবার। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় ওই বার্তা দিলেন বিলাবল। প্রসঙ্গত, নিহত প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পুত্র বিলাবল কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের তুলনা করে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সংঘাত উস্কে দিয়েছিলেন।

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় আদতে পাকিস্তানের সঙ্গে সাড়ে ছ’দশকের পুরনো সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) ভেঙে বেরিয়ে এলে পাকিস্তানের পঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে জলসেচ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। কারণ, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের উপরেই পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল!

প্রসঙ্গত, তিব্বতে সৃষ্ট সিন্ধু নদ জম্মু-কাশ্মীরের উপর দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। পঞ্জাব প্রদেশের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে শেষে দক্ষিণের বন্দর শহর করাচির কাছে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় টানা ন’বছরের আলোচনার পরে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সই হয়েছিল ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান চুক্তি করেছিলেন।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সই হওয়া ওই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং তার পশ্চিমের দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে পূর্ব দিকের তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র জল। সামগ্রিক ভাবে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির মোট জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার প্রায় ৮০ শতাংশ! ভারতের অধিকার ২০ শতাংশের সামান্য বেশি।

চুক্তির শর্ত বলছে, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই জল ব্যবহার করলেও কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না। কিন্তু কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে ভারত জল আটকে দিচ্ছে বলে ২০১৬ সালে অভিযোগ করে পাকিস্তান। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে নিরপেক্ষ দেশের পর্যবেক্ষকের দাবি তুলেছিল ইসলামাবাদ। ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তির অ্যানেক্সচার এফ-এর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ মেনে ‘নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ’ নিয়োগের প্রস্তাব মেনেও নেয়। কিন্তু এর পরেই একতরফা ভাবে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ইসলামাবাদ।

কিন্তু আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’-এর হাতেই বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নয়াদিল্লির অবস্থানে সায় দিয়েই ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ জানান, পাকিস্তানের প্রাপ্য জল আটকাতে নয়, ভারত নিজেদের প্রয়োজনেই কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে প্রকল্প নির্মাণ করেছে। ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ গোষ্ঠীর পর্যবেক্ষণ পর্বের মাঝেই গত বছরের অগস্টে ইসলামাবাদকে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে চিঠি দিয়েছিল নয়াদিল্লি। বস্তুত, তার পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল, ভারত ওই চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের পথে হাঁটতে চলেছে। ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ সীমান্ত-সন্ত্রাসের প্রভাব চুক্তির উপর পড়তে চলেছে বলে সেই চিঠিতেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল মোদী সরকার। পহেলগাঁও কাণ্ড সেই ‘বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে’ চলেছে?

Advertisement
আরও পড়ুন