বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে নির্বাচন কবে হবে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে এই প্রশ্ন বার বার উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিএনপি শিবিরও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে। এই বিতর্কের আবহে বাংলাদেশের নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন করাতে চায় ইউনূসের সরকার। সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন হয়। এর পর ৮ অগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যার প্রধান উপদেষ্টা করা হয় ইউনূসকে। ইউনূস প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইতিউতি প্রশ্ন উঠতে থাকে নির্বাচনের বিষয়ে। কবে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে কৌতূহল জন্মাতে থাকে সে দেশের সাধারণ মানুষের মনে। অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই খালেদা জিয়ার বিএনপি-ও এ নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিতে শুরু করেছে। খালেদা-পুত্র তথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও এ নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন ইউনূসের প্রশাসনকে।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আর কত মাস প্রয়োজন? তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তারেক। বিএনপি নেতার বক্তব্য, এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি অবশ্যই গণ–আকাঙ্ক্ষাবিরোধী হবে। সম্প্রতি লন্ডনে এক ভার্চুয়াল বক্তৃতায় খালেদা-পুত্র বলেছেন, “বাংলাদেশে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মহল ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য বিএনপির হাত থেকে সম্ভাব্য জয়কে কেড়ে নেওয়া।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন এ নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং ভোটার তালিকা সংস্কার করে নির্বাচন করতে ৩-৪ মাসের বেশি লাগে না। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ করে, সে কথাও বলেছিলেন তিনি।
গত অগস্টে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরে ইউনূস জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন করানো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার বিভিন্ন মত সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। ইউনূস প্রশাসনের অন্যতম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ নির্বাচন হতে পারে। তার আগে অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের আর এক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব।
এক এক উপদেষ্টার মুখে নির্বাচন নিয়ে এক এক ধরনের মন্তব্য উঠে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে বিএনপি শিবির। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি-ই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে। সেই দলের থেকে পর পর এমন প্রশ্নের মুখে সোমবার নির্বাচনের বিষয়ে মুখ খুললেন ইউনূস।