UK Election 2024

ব্রিটেনে শেষ ভোটগ্রহণ, সুনক না কি স্টার্মার, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে? জানা যেতে পারে কখন?

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এ মোট আসন ৬৫০। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘জাদু সংখ্যা’ ৩২৬। জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি এ বার ৪০০-র বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ০৩:৪৭
Rishi Sunak and Kier Starmer

(বাঁ দিকে) ঋষি সুনক এবং কিয়ের স্টার্মার (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনকের মেয়াদ জানতে আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (ভারতে বেলা ১১টা) শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে রাত ১০টা (ভারতীয় সময় রাতে সাড়ে ৩টে) পর্যন্ত। তার পরেই শুরু হবে গণনা। স্থানীয় সময় রাত ১২টায় প্রকাশিত হবে প্রথম ফল। তার পরের ফল প্রকাশিত হবে যথাক্রমে স্থানীয় সময় রাত ৩টে, ভোর ৪টে, ভোর ৫টা এবং সকাল ৭টায়।

Advertisement

অর্থাৎ শুক্রবার সকালেই (ভারতে তখন দুপুর) স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা কে হতে চলেছেন। এর পরে প্রথা মেনে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সুনক বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজা তৃতীয় চার্লসকে জানাবেন ভোটের ফলাফল। পরাজিত হলে ভিভিআইপি কনভয়ের বদলে সাধারণ গাড়িতে ডাউনিং স্ট্রিটে ফিরবেন তিনি। সেখানে বিদায়ী বক্তৃতা দেবেন। অন্য দিকে, বিজয়ী দলের নেতা প্রাসাদে গিয়ে রাজার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকার গড়ার আমন্ত্রণ আনতে যাবেন। এর পর ডাউনিং স্ট্রিটের সেই ‘১০’ লেখা কালো দরজার সামনে বক্তৃতা করবেন তিনি।

জনমত সমীক্ষা বলছে, ১৯৯৭ সালের ভোটে যেমন কনজ়ারভেটিভ পার্টির (টোরি) প্রধানমন্ত্রী জন মেজরকে ক্ষমতাচ্যুত করে লেবার পার্টির নেতা টনি ব্লেয়ার ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করেছিলেন, এ বার টোরি নেতা সুনককে হারিয়ে ‘ডাউনিং ডোরে’র সামনে দাঁড়াবেন লেবার প্রধান কিয়ের স্টার্মার। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এ মোট আসন ৬৫০। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘জাদু সংখ্যা’ ৩২৬। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি এ বার ৪০০-র বেশি আসন পেয়ে ১৪ বছরের টোরি শাসনের ইতি টানতে চলেছে।

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ বারই ভোটারদের ব্যালট পেপার নেওয়ার আগে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক হয়েছে। পরিচয়পত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে কোনও ভোটার ভোটকেন্দ্র গিয়ে ভোট দিতে না পারলে তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাঁরা প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাঁদের বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১০টা) মধ্যে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলে অনলাইনে আবেদন করতে বলেছে।

৪৪ বছর বয়সি সুনকের নেতৃত্বে কনজ়ারভেটিভরা ১০০-র নীচে নেমে শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ ফল করতে পারে বলেও পূর্বাভাস মিলেছে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল এক দশক আগে ভারতে, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে। এমনকি, সুনক নর্থ ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে তাঁর ‘শক্ত ঘাঁটিতে’ হারতে পারেন বলেও কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত! কয়েকটি জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পাবে, টোরিরা পাবে ২০ শতাংশ ও নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ভোট কেটে টোরিদের বড় ক্ষতি করতে চলেছে রিফর্মিস্টরা। ইঙ্গিত মিলেছে, গত বার টোরিদের ভোট দেওয়া এক-তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ নাগরিকের ভোট এ বার কট্টর অভিবাসন বিরোধী রিফর্ম ইউকে পেতে চলেছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আসনও এ বার অন্তত তিন গুণ বেড়ে ৪০ ছুঁতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। লড়াইয়ে রয়েছে গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ ছোট–বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবং নির্দলেরাও। ইতিহাস বলছে, ভারতের মতোই ব্রিটেনেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ফল অতীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের মতোই বহুদলীয় গণতন্ত্র, জটিল এবং মিশ্র জনবিন্যাস, প্রধান শত্রুকে হারাতে ‘ট্যাকটিক্যাল ভোট’— এ সবই নানা ভাবে কঠিন করে তোলে নির্বাচনী ফলাফলের অনুমান। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে এ বারের নির্বাচনে মোট ৪৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সুনক জোরগলায় জয়ের দাবি করলেও ভোটের আগেই কার্যত হার স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর দলের একাধিক প্রথম সারির নেতানেত্রী। প্রাক্তন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রী সুরেলা ব্রেভারম্যান বৃহস্পতিবার সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন— ‘‘আমাদের এখন বিরোধী আসনে বসার সময় হয়ে গিয়েছে।’’ একই সুর সুনকের দল টোরি পার্টির প্রবীণ নেতা, ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস দফতরের সচিব মেল স্ট্রাইডের গলাতেও।

ব্রেক্সিট–পরবর্তী সময় থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের জনগণ ক্ষুব্ধ বলে জনমত সমীক্ষাগুলির ইঙ্গিত। তা ছাড়া টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা টোরি নেতৃত্বের প্রতিও রয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ’। পাশাপাশি, গত পাঁচ বছর ধরে টোরিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তিন বার প্রধানমন্ত্রী বদলের প্রভাবও পড়তে পারে ভোটে।

অন্য দিকে, লেবারদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তাঁদের অ-শ্বেতাঙ্গ ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন। স্টার্মার গাজ়া হামলায় ইজ়রায়েলকে সমর্থন এবং অভিবাসন বিরোধী কড়া অবস্থান প্রকাশ করে সেই পথ প্রশস্ত করেছেন ইতিমধ্যেই। যার জেরে গত এক বছরে লেবার পার্টির সদস্যসংখ্যা কমেছে দু’লক্ষের বেশি! যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অভিবাসী ভোটের একটি অংশ ওয়ার্কার্স পার্টির দিকে যেতে পারে বলে কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত। যদিও শেষ পর্যন্ত স্টার্মার প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় ভর করে ওয়েস্টমিনস্টারের নিয়ন্ত্রণ দখল করবেন বলেই মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের বড় অংশ।

আরও পড়ুন
Advertisement