হামলার প্রাথমিক উদ্দেশ্য আতঙ্ক ও অস্থিরতা তৈরি করা এবং সে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত নড়িয়ে দেওয়া। —প্রতীকী চিত্র।
চলতি মাসের একেবারে শেষ থেকে আগামী বছরের গোড়া পর্যন্ত পাঁচ দিনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত হানতে কিছু জঙ্গি সংগঠনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ছক ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রেডারে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি, বাংলাদেশের ২৫টি নির্দিষ্ট এলাকায় আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে— এই হামলার প্রাথমিক উদ্দেশ্য আতঙ্ক ও অস্থিরতা তৈরি করা এবং সে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত নড়িয়ে দেওয়া। হামলার কোথায় কত ঝুঁকি জঙ্গি সংগঠনগুলি এলাকা ধরে ধরে তার একটি মূল্যায়ন করেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। এই হামলা প্রতিহত করতে বাংলাদেশ প্রশাসনের জন্য কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টে।
গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর-সহ কিছু উগ্রপন্থী সংগঠন এই নাশকতার পরিকল্পনা ছকেছে। পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র বাংলাদেশের বিশেষ কিছু জায়গায় মজুত করা হয়েছে। কারাবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি রয়েছে ২ জানুয়ারি। সেই সময়কে ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি ও আতঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গিদের।
বলা হচ্ছে, জঙ্গিদের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে খুলনা জেলার কোয়রা উপজেলা, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, চট্টগ্রাম সদর, খাগড়াছড়ি পার্বত্য অঞ্চলের দীঘিনালা, লালমণিরহাট জেলার রামগড়, গুলমারা, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জের মতো এলাকায় হামলা করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার উল্লেখ রয়েছে সমীক্ষার রিপোর্টে। আবার যশোরের মণিরামপুরে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ইতিহাস থাকায় হামলার জন্য উর্বর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কুমিল্লা ডিভিশনের সোনাগাজি, দাগানভুঁইয়া, দেবীদ্বার, চৌদ্দগ্রাম, চান্দিনার মতো এলাকাকে বলা হয়েছে, হামলা করলে খুব বেশি বাধা এখানে আসবে না। সুনামগঞ্জের জামাইগঞ্জ এলাকায়ও সতর্কতা না-নিয়ে আক্রমণ শানালে প্রতিরোধ আসতে পারে বলে আভাসদেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি, স্থানীয় এবং বাইরের জঙ্গিদের সমন্বয়ে এই হামলাগুলির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই সংগঠনগুলির মধ্যে জামাতুল মুজাহিদিন, হিযবুত তাহরীর রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের ঘাঁটি গাড়া অস্ত্র সরবরাহকারী এবং মায়ানমারের আরাকান জঙ্গি সংগঠনের একাংশ রয়েছে এই চক্রান্তে। স্থানীয় জঙ্গিদের অস্ত্র সাহায্য করা, প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো কাজ বাংলাদেশের বাইরে থেকে করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রকাশ।
গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র মজুত করা হয়েছে লালমণিরহাটের হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ-র বালিয়াডাঙ্গি, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের দীঘিনালা, মহাছড়ির মতো জায়গায়। চট্টগ্রাম পার্বত্য পরিষদের এই এলাকাগুলি থেকে মায়ানমার সীমান্ত কাছে হওয়ায় অস্ত্র আমদানি এবং প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবও রাখা হয়েছে রিপোর্টে। তার মধ্যে দেশের ভিতরে ও বাইরের রাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, যাতে জঙ্গিদের অস্ত্র এবং অন্যান্য সরবরাহের লাইনটিকে কেটে দেওয়া যায়। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া, সন্ত্রাস-বিরোধী কর্মকাণ্ডে জোর বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক পুঁজি তৈরি করা এবং এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার এগিয়ে আসা, দুর্গাপুজোর মতো স্পর্শকাতর সময়ে একত্রে খুব বেশি লোকের সমাবেশ না করার মতো বিষয় রয়েছে। রিপোর্টের শেষে বলা হচ্ছে, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় এই ধরনের পূর্বপরিকল্পিত হামলা ঠেকাতে পারে।