উপগ্রহে ধরা পড়ল ছবি
Israel-Palestine Conflict

সাদা পতাকা হাতে শয়ে শয়ে মানুষ দক্ষিণ গাজ়ার পথে

এ দিন হামলা তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হামলা চলেছে মূলত সেন্ট্রাল গাজ়ার ডের আর-বালা এলাকা ও উত্তর গাজ়ায়।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
তেল আভিভ শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৮
An image of Palestinians fleeing Gaza City to the southern Gaza Strip

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে পায়ে হেঁটে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগৃহীত।

উত্তর গাজ়ার মধ্যবিত্ত পাড়া। বাড়িতেই ছিলেন মহম্মদ। তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে দেখেন, রাস্তায় লোকজন পাগলের মতো ছুটছে। সেই সঙ্গে চিৎকার, ‘‘পালাও, সবাই পালাও। ওরা বোমা ফেলবে।’’ ২৯ অক্টোবরের ঘটনা। এর আগে ১২ দিন যুদ্ধ দেখে ফেলেছে গাজ়াবাসী। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন মহম্মদ। হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে। একটা অচেনা নম্বর। ওপারের কণ্ঠস্বরও অচেনা— ‘‘আমি ইজ়রায়েলি গোয়েন্দা দফতর থেকে বলছি...।’’

Advertisement

যুদ্ধের নানা কৌশল নিয়েছে ইজ়রায়েল। এ-ও তেমনই এক। মহম্মদের মতো আরও অনেকেই এমন ফোন পেয়েছেন। ২৯ অক্টোবর নির্ভুল আরবিতে ইজ়রায়েলি গোয়েন্দা বলেছিলেন, তিনটি টাওয়ারে বোমা ফেলা হবে। আশপাশের সব এলাকা ফাঁকা করতে হবে। আর সেই দায়িত্ব মহম্মদের। প্যালেস্টাইনি যুবক বলেন, ‘‘আচমকা কয়েকশো মানুষের প্রাণ আমার হাতে!’’ কেন তাঁকে এই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, বিন্দুমাত্র ধারণা নেই মহম্মদের। কিন্তু এর পরেও তিনি বারবার এমন ফোন পেয়েছেন। ফোনের ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলেও কী ভাবে যেন তাঁর কাছে খবর পৌঁছে দেন ইজ়রায়েলি গোয়েন্দারা! এক দিকে ফোনের অজ্ঞাতপরিচয় ওই সব কণ্ঠস্বরকে অনুরোধ করেছেন, ‘‘বোমা ফেলবেন না।’’ অন্য দিকে, রাস্তায় চিৎকার করতে করতে দৌড়েছেন মহম্মদ— ‘‘সবাই পালাও।’’ গলা শুকিয়ে গিয়েছে, তা-ও চিৎকার করা থামাননি পেশায় দন্তচিকিৎসক যুবক। বহু মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন মহম্মদ। আবার বহু মানুষকে চোখের সামনেই বিস্ফোরণে মারা যেতে দেখেছেন।

কখনও লিফলেট বিলি করে, কখনও বিমান থেকে সতর্কীকরণ নির্দেশিকা-সহ কাগজ উড়িয়ে, কখনও ফোন করে— নানা ভাবে উত্তর গাজ়াবাসীকে সাবধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জায়গা ফাঁকা করে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। যুদ্ধের এক মাসের মাথায় এখন দলে দলে লোক উত্তর গাজ়া থেকে সালা আল-ডিন রোড ধরে দক্ষিণের দিকে পালাচ্ছেন। গাজ়া স্ট্রিপের এটিই প্রধান সড়ক ও মূল উদ্ধারের পথ।

উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে পায়ে হেঁটে দক্ষিণের দিকে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে (সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো) এই রাস্তা সম্পূর্ণ নিরাপদ। আজ উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। সকলেই সাদা পতাকা নিয়ে হাঁটছেন। তা-ও ইজ়রায়েলি চেক পয়েন্টে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্কের পাশ দিয়ে হাত তুলে সাদা পতাকা নিয়ে হাঁটতে দেখা গিয়েছে অনেককে।

এ দিন হামলা তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হামলা চলেছে মূলত সেন্ট্রাল গাজ়ার ডের আর-বালা এলাকা ও উত্তর গাজ়ায়। গাজ়ার এক সাংবাদিক মাহমুদ বাসাম বলেন, ‘‘শ্বাস নিলে নাক জ্বালা করে। শুধু ধুলো। আর একটা পচা গন্ধ। ধুলো আর পোড়া ছাই মেশানো গন্ধ।’’

ওই সাংবাদিক জানিয়েছেন, সকলে মাস্ক পরছেন। কাছাকাছি বিস্ফোরণ ঘটলে শ্বাস নেওয়া আরও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তবে দক্ষিণ গাজ়াও নিরাপদ নেই। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করেছে, গত কয়েক দিনে যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তার ৪৯ শতাংশ মারা গিয়েছে দক্ষিণ গাজ়ায়। তবু বাঁচার আশায় দক্ষিণের দিকে যাচ্ছেন অগুণতি মানুষ।

Advertisement
আরও পড়ুন