(বাঁ দিকে) ট্রেনের চালক আমজাদ। সেই জাফর এক্সপ্রেস (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের দিকে যাচ্ছিল জাফর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি এলাকায় মাশকাফের ৮ নম্বর পাহাড়ি সুড়ঙ্গের সামনে আসতেই ইঞ্জিনের নীচে বিকট শব্দে একটা বিস্ফোরণ হয়েছিল। এর পরে ট্রেন থামতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বালোচ বিদ্রোহীদের হামলা। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে ট্রেনটিকে কব্জা করে রেখেছিলেন বিদ্রোহীরা। এখনও চোখ বুজলেই সেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন জাফর এক্সপ্রেসের চালক আমজাদ। তিনি জানিয়েছেন, বহু যাত্রীর সঙ্গে তিনিও মড়ার মতো পড়েছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিদ্রোহীরা দেখে ভেবেছিলেন, দেহে প্রাণ নেই। তাতেই প্রাণরক্ষা হয়েছিল।
পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে ৪৪০ জন যাত্রীকে নিয়ে মঙ্গলবার ট্রেন চালিয়ে পেশোয়ার যাচ্ছিলেন আমজাদ। যদিও অন্যান্য দিনের মতো হয়নি সেই যাত্রা। তিনি জানিয়েছেন, ইঞ্জিনের নীচে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল বালোচ বিদ্রোহীরা, যাতে ট্রেনের বাকি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। আমজাদের কথায়, ‘‘ট্রেন থামতেই হামলা শুরু করে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মির জঙ্গিরা।’’ হামলার ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলেন যাত্রীরা। অনেকেই মড়ার মতো পড়েছিলেন ট্রেনের কামরায়। আমজাদের কথায়, ‘‘জানলার কাচ ভেঙে ট্রেনে প্রবেশ করে জঙ্গিরা। কিন্তু ওরা ভেবেছিল, আমরা মারা গিয়েছি।’’ তাতেই প্রাণরক্ষা হয়েছিল আমজাদ-সহ আরও অনেকের।
জাফর এক্সপ্রেসের যে যাত্রীরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রেনের ভিতরে ঠিক কী ঘটেছিল। তাঁদের দাবি, যাত্রীরা কোন অঞ্চলের বাসিন্দা, তা জানতে চেয়েছিলেন বালোচ বিদ্রোহীরা। তার পরে তাঁদের আলাদা আলাদা দলে ভাগ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনকে নিশানা করেছিলেন বিদ্রোহীরা। পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে ছিলেন কয়েক জন পাকিস্তান সেনা। তাঁরা ছুটিতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের খুঁজে খুঁজে মেরেছেন বিদ্রোহীরা। অপহৃত ওই ট্রেনে ছিলেন আরসালান ইউসুফ। প্রাণে বেঁচে ফেরার পরে তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ওরা মাঝেমাঝেই সেনাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। তার পরে খুন করছিল।’’ আরসালানের দাবি, শুধু সেনা নয়, বেশ কয়েক জন যাত্রীকেও নিশানা করেছিলেন বিদ্রোহীরা। কেউ ক্ষোভপ্রকাশ করলে তাঁকেও বিদ্রোহীরা খুন করেন বলে দাবি তাঁর।
৩১ বছরের মেহবুব আহমেদকেও গুলি করেছিলেন বিদ্রোহীরা। তিনি প্রাণে বেঁচে যান। মেহবুব জানিয়েছেন, কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কয়েক জন সফল হন। তাঁর মতো কেউ কেউ ধরা পড়ে যান। মেহবুবের কথায়, ‘‘আমরা সেই অপহৃত ট্রেন থেকে দু’বার পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কয়েক জন সফল হন। বালোচ বিদ্রোহীদের গুলিতে কয়েক জন নিহত হয়েছিলেন।’’ জাফর এক্সপ্রেস থেকে বেঁচে ফিরেছেন আর এক যুবক মহম্মদ তানভির। তিনি জানিয়েছেন, ট্রেন অপহরণের পরে শুধুই জল খেতে দিয়েছিলেন অপহরণকারীরা। দেড় দিন কোনও খাবার দেওয়া হয়নি তাঁদের।
ভৌগোলিক ভাবে প্রতিকূল ওই এলাকায় প্রায় ৩০ ঘণ্টার অভিযান শেষে বুধবার রাতে জাফর এক্সপ্রেস থেকে বেশির ভাগ যাত্রীকে উদ্ধার করে পাকিস্তানের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। নিহত হয়েছেন ২১ জন সাধারণ মানুষ এবং চার জন জওয়ান। সেনা অভিযানে ৩৩ জন বিদ্রোহীরও প্রাণ গিয়েছে। যদিও পাকিস্তানের প্রশাসনের এই দাবি মানেননি বালোচ বিদ্রোহীরা। তাঁরা পাক সেনার পরিসংখ্যান অস্বীকার করেছে।