Israel-Palestine Conflict

হামাসের হামলায় ইয়ম কিপুর যুদ্ধের ছায়া দেখছে ইজ়রায়েল

১৯৭৩ সালের যুদ্ধের সঙ্গে বর্তমান সঙ্কটের তুলনা করতে রাজি নয় ইজ়রায়েলি সেনা। তাদের মুখপাত্র রিচার্ড হেক্টের মতে, ‘‘দয়া করে ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সঙ্গে হামাসের হামলার তুলনা করবেন না।”

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
জেরুসালেম ও ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২৯
An image of Israel-Palestine Conflict

হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের দেহের সামনে ই‌জ়রায়েলি পুলিশ। রবিবার গাজ়া সীমান্তের কাছে। ছবি: পিটিআই।

৬ অক্টোবর, ১৯৭৩। ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র দিন ইয়ম কিপুর। ইজ়রায়েল আক্রমণ করেছিল কয়েকটি আরব দেশের জোট। লড়াই হয়েছিল মূলত গোলান হাইটস, সাইনাই-সহ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইজ়রায়েলের দখল করা এলাকায়। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জেতে ইজ়রায়েল।

Advertisement

৬ অক্টোবর, ২০২৩। ইহুদিদের আর এক পবিত্র দিবস সিমহাত টোরায় গাজ়া ভূখণ্ড থেকে প্যালেস্টাইনি মৌলবাদী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলার মুখে পড়ল ইজ়রায়েল। কেবল প্রায় ৫ হাজার রকেট নয়, গাজ়া ভূখণ্ড থেকে আকাশ, জল ও স্থলপথে ইজ়রায়েলের কয়েকটি এলাকায় ঢুকে পড়েছে হামাস যোদ্ধারা। আপাতত হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইজ়রায়েল।

কিন্তু ১৯৭৩ সালের মতোই ২০২৩ সালের ঘটনাতেও উঠে আসছে একটি প্রশ্ন। বস্তুত গত কালের ঘটনায় ইয়ম কিপুর যুদ্ধের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেক ইজ়রায়েলিই। তাঁদের প্রশ্ন, মোসাদ-সহ ইজ়রায়েলের বিখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা ও সেনা হামাসের এত বড় হামলার প্রস্তুতির কোনও ইঙ্গিত পেল না কেন? নাকি ইঙ্গিত পেলেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ইয়ম কিপুর যুদ্ধের বার্ষিকী নিয়ে বিগত কিছু দিন ধরেই চর্চা চলছিল ইজ়রায়েলের নানা শিবির ও সংবাদমাধ্যমে। অনেকের মতে, সেই স্মৃতি উস্কে দিতেই ওই বার্ষিকীতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে হামাস। ১৯৭৩ সালেও ইজ়রায়েলিদের বড় অংশই উৎসবে মেতে থাকার সময়ে হামলা চালিয়েছিল আরব দেশগুলি। এ বারেও ইজ়রায়েলের গাজ়া সীমান্তবর্তী এলাকায় উৎসবে ব্যস্ত ইজ়রায়েলি ও অন্য দেশের নাগরিকদের উপরে হামলার সুযোগ পেয়েছে হামাস।

ইজ়রায়েলের মোসাদ, শিন বেট-সহ গুপ্তচর সংস্থাগুলি অতীতে বহু বার অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। প্যালেস্টাইনি মৌলবাদী গোষ্ঠী ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চর থেকে শুরু করে ড্রোন ও উপগ্রহে নজরদারির ক্ষেত্রে ইজ়রায়েল অন্য অনেক দেশের থেকেই এগিয়ে। আমেরিকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে ইজ়রায়েল।

আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, এ ক্ষেত্রে এমন বড় মাপের কোনও হামলার প্রস্তুতির কথা জানাই ছিল না আমেরিকান গোয়েন্দা বা সেনা আধিকারিকদের। আবার ইজ়রায়েলি আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, তাঁদের কাছেও এমন হামলা নিয়ে তথ্য ছিল না। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে ইজ়রায়েলি সরকার সূত্রে খবর।

তবে ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের সঙ্গে বর্তমান সঙ্কটের তুলনা করতে রাজি নয় ইজ়রায়েলি সেনা। তাদের মুখপাত্র রিচার্ড হেক্টের মতে, ‘‘দয়া করে ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সঙ্গে হামাসের হামলার তুলনা করবেন না। তবে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’

তবে অনেকের মতে, গাজ়ায় হামাসের কার্যকলাপকে সম্ভবত সম্প্রতি একটু কম গুরুত্ব দিচ্ছিল ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলের বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছিল নেতানিয়াহু সরকার। তার ফলে দেশে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়। সেই সঙ্গে সৌদি আরবের কাছ থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেতে ওয়াশিংটন ও রিয়াধের সঙ্গে জটিল এক ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় ব্যস্ত ছিল নেতানিয়াহু সরকার। আমেরিকান বিদেশ দফতরের প্রাক্তন পশ্চিম এশিয়া সংক্রান্ত মধ্যস্থতাকারী আরন ডেভিড মিলারের মতে, ‘‘ইজ়রায়েলিরা ভাবতেই পারেননি হামাস সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাবে।’’ গাজ়া সীমান্তে উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর-সহ বেড়া হামাস যোদ্ধারা বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে ইজ়রায়েলে ঢুকেছে।

সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ইজ়রায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ভূমি থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও। এই ব্যবস্থায় একটি রেডারের মাধ্যমে স্বল্প পাল্লার রকেট, গোলা, বিমান, হেলিকপ্টার ও ড্রোনের সন্ধান পাওয়া যায়। তার পরে হামলার ধরন বুঝে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেই বিপদের মোকাবিলা করে ‘আয়রন ডোম’। কিন্তু চলতি হামলার ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থাও পুরোপুরি সফল হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস। ফলে ‘আয়রন ডোম’ ব্যবস্থার পক্ষে সব রকেটের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব হয়নি। ইজ়রায়েলকে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল সাহায্য করে আমেরিকা। ফলে এই ব্যর্থতা নিয়ে আমেরিকান কংগ্রেসেও প্রশ্ন উঠবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সংবাদ সংস্থা

Advertisement
আরও পড়ুন