Imran Khan

ইমরান আগামী পাঁচ বছর রাজনীতি থেকে নির্বাসিত, জানিয়ে দিল পাক নির্বাচন কমিশন

ইসলামাবাদের আদালত সাজা ঘোষণার পরেই পাক পঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাড়ি থেকে ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা পাক পঞ্জাবের অটক শহরের কারাগার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ২৩:১৫
An image of Imran Khan

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।

ইসলামাবাদের বিশেষ আদালত শনিবার তোশাখানা মামলায় তিন বছরের জেলের সাজা ঘোষণার পরে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘রাজনৈতিক ভবিষ্যতের আঁচ’ দিয়েছিল সে দেশের সংবাদমাধ্যম। মঙ্গলবার সে কথাই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করল পাক নির্বাচন কমিশন। জানিয়ে দিল, আগামী পাঁচ বছর ভোটে লড়া-সহ কোনওরকম রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চেয়ারম্যান ইমরান। এমনকি, পিটিআইয়ের সর্বোচ্চ পদে তাঁর বহাল থাকা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে।

Advertisement

ইসলামাবাদের আদালত সাজা ঘোষণার পরেই পাক পঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাড়ি থেকে ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা পাক পঞ্জাবের অটক শহরের কারাগার। সেখানেই এক সময় বন্দি থেকেছেন পাকিস্তানের নামজাদা রাজনীতিকেরা। দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক সময় অটক দুর্গে বন্দি থাকতে হয়েছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারিকে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ১৯৯৯ সালে যখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, তখন দুর্নীতির দায়ে বন্দি ছিলেন অটক দুর্গে। সে দিক থেকে দেখলে ইমরানই দেশের প্রথম কোনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে অটক জেলে বন্দি রাখা হয়েছে।

তিন বছর জেলের পাশাপাশি, ইমরানের এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। চলতি বছরেই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছিল, মুসলিম লিগ নওয়াজ-পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোট সরকারের আমলে বেহাল আর্থিক পরিস্থিতির কারণে আবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইমরানের। কিন্তু ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা ‘পিচে’ পাক ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন অধিনায়কের ‘প্রত্যাবর্তন’কে কার্যত অসম্ভব করে তুলল।

পিটিআইয়ের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, অটক জেলের সুপার এবং পঞ্জাব প্রদেশের অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পদ্ধতি মেনে আবেদন করা হলেও ইমরানের সঙ্গে তাঁর আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিতে সই করানো যাচ্ছে না তাঁকে দিয়ে। ৯ মে একটি দুর্নীতির মামলায় ইমরানের গ্রেফতারির পরে তাঁর দলের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং সেনার সৌধে হামলার অভিযোগও ওঠে। এ বার কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও অবনতি ঘটেনি। হয়নি বড় মাপের বিক্ষোভও।

তোশাখানা মামলার সূত্রপাত গত বছর ইমরান ক্ষমতা হারানোর পরে। দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে ইমরান একটি দামি ঘড়ি উপহার পেয়েছিলেন। সেটি ইমরানের থেকে তিনি ২০ লক্ষ ডলারে (প্রায় ৫৬ কোটি পাকিস্তানি রুপি) কিনে নিয়েছিলেন বলে ওই ব্যবসায়ী জানান। তাঁর দাবি, ২০১৯ সালে যখন ইমরানের দল পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় ছিল, তখন সৌদি আরবের রাজা মহম্মদ বিন সলমন তাঁকে ওই বহুমূল্য ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইমরান গত অক্টোবরে ইসলামাবাদ হাই কোর্টে আবেদন জানালেও আদালত তা খারিজ করে দিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে বলেছিল তাঁকে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীরা যা উপহার পান, তা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। তবে ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপির কম মূল্যের উপহার হলে প্রধানমন্ত্রী তা নিজের কাছে রাখতে পারেন। তার বেশি মূল্যের কোনও উপহার পছন্দ হলে, বাজার-মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করে তা নিজের কাছে রাখতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পাক ক্রিকেটার-রাজনীতিক সেই আইন এড়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবে উপহার পাওয়া সামগ্রীর দাম কমিয়ে দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন
Advertisement