আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বদলে ফেলতে চান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগে বার বার বাদ সাধছে সে দেশের আদালত। মেরিল্যান্ড ফেডারেল আদালত আইন বদলের সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে। এ বার আইন বদল করতে চেয়ে নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ট্রাম্প! জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জিও জানান তিনি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোটে জয়ের পরেই সে দেশের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ১৫৬ বছরের পুরনো আইন বদলানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। গত ২১ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত এক সরকারি নির্দেশনামায় সইও করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ ধাক্কা খায় আদালতে।
ট্রাম্পের এগ্জ়িকিউটিভ অর্ডারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে অভিবাসীদের সংগঠন আমেরিকার সিভিল লিবার্টিজ় ইউনিয়ন। এর পরে মামলা করেন এক সন্তানসম্ভবা মহিলা। পরে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্বাধীন ২২টি প্রদেশ এক হয়ে মামলা করে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্ট এবং সান ফ্রান্সিসকো শহর। বস্টন এবং সিয়াটলের কোর্টে এই মামলাগুলি হয়েছে।
এই সংক্রান্ত মামলায় বিচারক জর্জ ডেবোরা তাঁর নির্দেশে ট্রাম্পের উদ্যোগকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য নয়।’’ শুধু মেরিল্যান্ডের ফেডারেল আদালত নয়, ওয়াশিংটন এবং ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতও ট্রাম্পের নির্দেশনামা কার্যকরের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। নিম্ন আদালতে বার বার ধাক্কা খাওয়ায়, এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর যুক্তি, নিম্ন আদালত জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বদল আটকে দিয়ে প্রশাসনিক কাজে বাধার সৃষ্টি করছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, ট্রাম্পের নীতি সাংবিধানিক না অসাংবিধানিক, তা নির্ধারণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেননি প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা। তাঁদের আবেদন, নিম্ন আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরিধি সীমিত করা। অর্থাৎ, মনে করা হচ্ছে, যদি ট্রাম্পের আবেদন সবুজ সঙ্কেত দেয় সুপ্রিম কোর্ট, তবে আইন বদলে কিছু রদবদল করতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ১৮৬৮ সালে আমেরিকার সংবিধানে ১৪তম সংশোধনী যোগ করা হয়। সেখানে বলা হয়, আমেরিকায় জন্মালেই সেখানকার নাগরিকত্ব মিলবে। ১৯৫২ সালের অভিবাসন এবং জাতীয়তা আইনেও একই কথা বলা হয়েছে। এই ধারারই বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্প। তাঁর নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও শিশু আমেরিকায় জন্মালেও যদি তার মা বেআইনি ভাবে সে দেশে বসবাস করেন এবং বাবা আমেরিকার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) হন, তা হলে তাকে নাগরিকত্ব দেবে না আমেরিকা। কোনও শিশুর মা যদি আইনি কিন্তু অস্থায়ী ভাবে যদি আমেরিকায় থাকেন বা পড়ুয়া অথবা পর্যটন ভিসায় আমেরিকায় থাকেন এবং বাবা যদি নাগরিক না হন, তা হলে এ দেশে জন্মালেও সেই শিশু নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের দাবি, বহু বিদেশি মহিলা আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, যাতে সেই সন্তান সে দেশের নাগরিকত্ব পায়।