Muhammad Yunus

এখন বিএনপি বনাম জামায়াত

বিএনপির একাংশের দাবি, ছাত্রদের এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে তাদের ভূমিকা যে মানুষ ভোলেনি, তা বুঝে তারা মুক্তিযুদ্ধ ও তার ফল স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানকে ‘কবরে পাঠাতে’ উঠে পড়ে লেগেছে।

Advertisement
অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫৫
পাঁচ মাস পূর্ণ হল ইউনূসের।

পাঁচ মাস পূর্ণ হল ইউনূসের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সংস্কার ‘টেকসই হওয়ার নয়’ দাবি করে অবিলম্বে দেশে সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানাল জনভিত্তির দিক দিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৃহত্তম দল বিএনপি। সদ্য পাঁচ মাস পূরণ করা ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপরে যে তাদের আস্থা কমছে, এই দাবিতে ফের সেটা সামনে এল। আর সংস্কার নিয়ে তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্য ইসলামী দলগুলির সঙ্গে সংঘাতের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে খালেদা জিয়ার দলকে। কারণ জামায়াত এবং তাদের সহচরের ভূমিকা নেওয়া তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা দাবি জানাচ্ছে— সুযোগ এসেছে রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনের সার্বিক সংস্কার করার। তাদের দাবি, তা শেষ না করে সাধারণ নির্বাচন করলে সুযোগ নষ্ট হবে। তাই তারা প্রচলিত সংবিধান সম্পূর্ণ খারিজ করে নতুন সংবিধান রচনার দাবিও তুলেছে, যার বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবারও বলেছেন, “দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হচ্ছে নির্বাচন। এটা সংস্কারেরও প্রথম ধাপ। বিএনপির মতো জনপ্রিয় দলকে বাইরে রেখে কিছু করা যাবে না।”

Advertisement

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে বলেন, “নির্বাচিত সরকার ও নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনও সংস্কারের কাজ স্থায়িত্ব পেতে পারে না। এই কারণেই আমরা নির্বাচন চাইছি।” বিএনপি নেতার কথায়, “সংস্কার অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেই সংস্কারের পিছনে নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার থাকা চাই। এটা ছাড়া সংস্কারকে গ্রহণযোগ্যতা দিতে পারব না আমরা।” মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারছি না। একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতা লাভের জন্য।”

এই ‘অসুস্থ প্রতিযোগিতা’র জন্য বিএনপি নেতৃত্ব যে জামায়াতে ইসলামী ও কোটা-বিরোধী ছাত্রদের দায়ী করছেন, তা স্পষ্ট। পাঁচ মাস আগে হাসিনা-উচ্ছেদের আন্দোলনে সার্বিক ঐক্য যে আর টিকে নেই, দু’পক্ষই তা উচ্চগ্রামে ঘোষণা করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা হাসনাত আবদুল্লা বলছেন, “এক হানাদার গিয়ে আর এক দল হানাদার ক্ষমতায় বসার এই চক্রটাকে ভাঙার জন্যই এত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এই কারণেই আমরা প্রচলিত সংবিধান থেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা— সবেরই সার্বিক উচ্ছেদ চাইছি। কারণ এর মধ্যেই রয়েছে স্বৈরাচারের বীজ।”

বিএনপির একাংশের দাবি, ছাত্রদের এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে তাদের ভূমিকা যে মানুষ ভোলেনি, তা বুঝে তারা মুক্তিযুদ্ধ ও তার ফল স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানকে ‘কবরে পাঠাতে’ উঠে পড়ে লেগেছে। বিএনপি নেতা হাফিজউদ্দিন আহমদের কথায়, “একাত্তরের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার একটা সুযোগ জামায়াতের কাছে এসেছিল। কিন্তু তারা সে দিনের ভুমিকাকে যুক্তিযুক্ত করারই চেষ্টা করছে!”

যদিও অনেকেই মনে করেন, বিএনপির এই জামায়াত-বিরোধিতায় আস্থা রাখা কঠিন। তারা মৌলবাদী ওই দলের দীর্ঘদিনের শরিক। আত্মগোপনে থাকা এক সাংস্কৃতিক কর্মীর কথায়, “কোনও বাইরের শক্তির নির্দেশে জামায়াত আজ বিএনপিকে বাদ দিয়ে ইসলামী জোট গড়ে এগোতে চেষ্টা করছে বলেই মির্জা ফখরুলেরা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। পরিস্থিতি বদলালে ফের তারা গলাগলি করবেন না, কে বলতে পারে?” বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজ়ভিকে এই প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “জামায়াত আমাদের নিছক নির্বাচনী শরিক ছিল। তাদের সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির বহু যোজন তফাত। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। কৌশলগত ভাবে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের চলতে হয়েছে। ভারতে যেমন এনডিএ সরকারে বিজেপির সঙ্গে জর্জ ফার্নান্ডেজের মতো সোশ্যালিস্টরাও ছিল।”

কিন্তু চলতি বছরে নির্বাচন হলে কি অনায়াসে জিতে সরকার গড়বে বিএনপি? খালেদা জিয়ার দল তেমনটা এত দিন ভেবে এলেও সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নির্বাচন করিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সেখানে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল নিয়েছে জামায়াত। ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাহায্য নিয়ে বিএনপির সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলকে মারধর করে ছাত্রাবাসগুলো থেকে বার করে দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের নির্দেশে এর পরে দেশে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করাতে চায় ইউনূস সরকার। বিএনপি মনে করছে, তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে খুঁচিয়ে তুলতেই এই কৌশল। তাই সবার আগে সাধারণ নির্বাচন করানোর দাবিও তুলেছে বিএনপি।

Advertisement
আরও পড়ুন