(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আগে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের বিচার চাই। বিচারের আগে নির্বাচন করা যাবে না বাংলাদেশে। মঙ্গলবার ঢাকার সমাবেশ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই দাবি তুলে ধরলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ঢাকার শহিদ মিনার চত্বর থেকে তাঁদের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের তরফে একটি ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের আশ্বাস দেওয়ায় সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে। মঙ্গলবার ঢাকার সমাবেশ থেকে মূলত চার দফা দাবির কথা ঘুরে ফিরে এসেছে তাঁদের মুখে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, ছাত্রনেতাদের প্রথম দাবি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। দ্বিতীয় দাবি, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। তৃতীয় দাবি, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। চতুর্থ দাবি, সংস্কারের পর নির্বাচন করতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নির্বাচনের আগে বিচার এবং সংস্কারের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ছাত্রনেতারা। তাঁদের বক্তব্য, “এই মুহূর্তে দরকার বিচার আর সংস্কার।” মঙ্গলবার ঢাকার সমাবেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনও নির্বাচন হবে না।”
গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে অগস্টে পতন হয় হাসিনার সরকারের। দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশে কবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে তখন থেকেই। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার দল বিএনপি নির্বাচনের জন্য ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর আরও চাপ তৈরি করেছে। খালেদা-পুত্র তথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও এ নিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন ইউনূসের প্রশাসনকে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আর কত মাস প্রয়োজন? তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তারেক।
এই বিতর্কের আবহে সম্প্রতি নির্বাচনের বিষয়ে সম্ভাব্য দিনক্ষণ জানিয়েছে ইউনূসের প্রশাসন। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন করাতে চায় ইউনূসের সরকার। ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। যদিও ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলা কিংবা জাতীয় সংসদের ভোটের আয়োজন নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার এখন শেখ হাসিনার জমানার বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত করা।
তবে ভোট নিয়ে চর্চা চলেই যাচ্ছে বাংলাদেশে। সে দেশের নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, তারা নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়টি ইউনূস প্রশাসন কিংবা আদালতের উপর নির্ভর করছে বলে মত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের।