(বাঁ দিকে) মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ‘বিভ্রান্তিকর’। এমনটাই দাবি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধান। ভারত সফরে এসে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানের ওই মন্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁর মন্তব্য ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং সুনামের জন্য ক্ষতিকর’ বলে মনে করছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘বাসস’ জানিয়েছে, এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার বেশি রাতের দিকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ইউনূস প্রশাসন। বিবৃতিতে তাদের দাবি, “বাংলাদেশ ঐতিহ্যগত ভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য পরিচিত।” ঢাকার ওই বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি করেছে।
ভারত সফরে এসে সোমবার প্রথমে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন গ্যাবার্ড। এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দেন। ওই সাক্ষাৎকারে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান জানান, বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন’ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে আমেরিকা। বিশেষত, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানদের নিয়ে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘ইসলামিক সন্ত্রাস’ নিয়েও যথেষ্ট অস্বস্তি রয়েছে আমেরিকার। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ভাবধারাকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছেন তুলসী।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক-সহ অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দুর্ভাগ্যজনক নির্যাতন, হত্যা, হেনস্থা আমেরিকা সরকার, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এই নিয়ে সবেমাত্র কথাবার্তা শুরু হলেও বিষয়টি উদ্বেগে রেখেছে তাঁদের। মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানের মতে, “ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভাবধারা এবং লক্ষ্য একই— ইসলামিক খিলাফত নীতি এবং শাসন চালু করা।’’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের উপর ভিত্তি না করেই ওই মন্তব্য করেছেন গ্যাবার্ড। আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধানের মন্তব্য গোটা বাংলাদেশকে ‘অন্যায় এবং অতিরঞ্জিত’ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি ইউনূস প্রশাসনের। তাদের বক্তব্য, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তবে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সংস্কার এবং অন্য সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে ওই চ্যালেঞ্জের ধারাবাহিক ভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে।