শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর শপথ নিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে দাঁড়িয়ে এই শপথ নিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে পাল্টা আন্দোলনের বার্তাও দিয়েছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে দেশে ফেরানোর কথা বলছেন বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন শাসকদলের নেতা-কর্মীরা।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, বুধবার টুঙ্গিপাড়ায় মুজিবের সমাধিস্থলের সামনে জড়ো হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী। ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলি খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহবুদ্দিন আজম-সহ অনেকে। মাহবুবের নেতৃত্বে শপথবাক্য পাঠ করা হয়। মুজিবের সমাধির উপরে শূন্যে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত রেখে হাসিনার উপর ঘটা অন্যায়ের প্রতিশোধের শপথ নিয়েছেন দলের সদস্যেরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জুড়ে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে, তা রুখে দেওয়ার প্রতিজ্ঞাও করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মাহবুব বলেন, ‘‘আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা বঙ্গবন্ধু মুজিবের কন্যা হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনব। তাঁর অনুপস্থিতিতে জামাত এবং বিএনপি দেশ জুড়ে যে অরাজকতা তৈরি করেছে, আমরা তা বন্ধ করব।’’
হাসিনাকে দেশে না ফেরাতে পারলে তাঁরাও ঘরে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাহবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যত দিন না আমাদের নেত্রীকে দেশে ফেরাতে পারছি, তত দিন আমরাও ঘরে ফিরব না। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। হাসিনাকে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনবই।’’
উল্লেখ্য, ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর গত সোমবার ইস্তফা দিয়েছেন হাসিনা। দেশ জুড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন তিনি। তার পর বোন রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছেন ভারতে। আপাতত কিছু দিন দিল্লিতেই থাকবেন তিনি। ভারত সরকার তাঁকে ধাতস্থ হতে কিছু দিন সময় দিয়েছে। মঙ্গলবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, হাসিনা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য তাঁকে কিছু দিন সময় দেবে ভারত। তাঁর সিদ্ধান্ত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী এবং ছাত্রনেতাদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে মুহাম্মদ ইউনূসের নাম স্থির হয়েছে। বৃহস্পতিবারই দেশে ফিরবেন নোবেলজয়ী ইউনূস। তার পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে। সরকার পড়ে যাওয়ার পর বিরোধী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে আওয়ামী লীগের কর্মী এবং নেতাদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের ১০ তলা কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লুটপাটও চলেছে বলে অভিযোগ। চেয়ার, টেবিল, এমনকি শৌচাগারের কমোডও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওই কার্যালয় থেকে। এ বার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধের শপথ নিলেন আওয়ামী লীগের সদস্যেরা।