Election In Hong Kong

মাথা নিচু করে মানুষের অনুযোগ শোনেন কাউন্সিলর

হংকংয়ের নির্বাচন সেই তুলনায় নিস্তরঙ্গ। শেষ ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। হংকং চিনের অন্তর্গত বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, স্বতন্ত্র দেশ নয়।

Advertisement
চিরদীপ দে
হংকং শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৫:৪১

—প্রতীকী চিত্র।

ভারতে নির্বাচনের ডঙ্কা বাজতেই সুদূর হংকংয়ে তার উত্তাপ ছড়িয়েছে। এখন ভারতীয় খবরের চ্যানেলগুলি দেখা আর পপকর্ন সহযোগে সিনেমা দেখা একই ব্যাপার। তর্ক, চিৎকার,উত্তেজনা— কিছুরই অভাব নেই।

Advertisement

হংকংয়ের নির্বাচন সেই তুলনায় নিস্তরঙ্গ। শেষ ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। হংকং চিনের অন্তর্গত বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, স্বতন্ত্র দেশ নয়। দ্বীপপুঞ্জ সমেত আয়তনে কলকাতার পাঁচ গুণ। এখানে দু’ধরনের নির্বাচন হয়— একটি লেজিসলেটিভ কাউন্সিল বা ‘লেজকো’, যা হংকংয়ের পার্লামেন্টের সমকক্ষ। অন্যটি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল বা স্থানীয় আইন পরিষদ। লেজকোর কাজ আইন প্রণয়ন, বাজেট পাশ ও সরকারের কাজ খুঁটিয়ে দেখা। স্থানীয় আইন পরিষদগুলির ক্ষমতা কম, তাঁরা স্থানীয় সমস্যাগুলি দেখেন— যেমন সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সরকারি সম্পত্তি ও উন্মুক্ত স্থানগুলি রক্ষণাবেক্ষণ, আপদে-বিপদে ত্রাণ পাঠানো ইত্যাদি।

এখানে ১৮টি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল এব‌ং ৪৭০ জন কাউন্সিলর আছেন। কাউন্সিলরেরা জনসংযোগ রক্ষা করেন সারা বছর। নির্দিষ্ট অফিস থাকলেও এঁরা মাঝে-মধ্যেই রাস্তায়, মেট্রো স্টেশনে বা মলে দাঁড়িয়ে সাধারণের সঙ্গে কথা বলেন। অনেক সময়ে মানুষের অনুযোগ মাথা নিচু করে শুনতে দেখেছি। লেজকো সদস্যেরাও সাধারণের সঙ্গে মেশেন এবং অনেক সময়ে তাঁদের সাধারণ ট্রেনে-বাসে দেখা যায়। ভারতের সঙ্গে এঁদের নির্বাচনের মিল প্রায় নেই। প্রার্থীরা প্রচার সারেন ব্যানার, পোস্টার, বিজ্ঞাপনের সাহায্যে। দেওয়াল লিখনের প্রশ্নই নেই। যত্রতত্র পোস্টার মারা নিষেধ, তবে বন্ধ দোকানের শাটারে পোস্টার সাঁটা চোখে পড়ে। প্রার্থীরা নিজেরা তাঁদের সাফল্যের খতিয়ান লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেন। কিন্তু তার জন্যও নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। লিফলেটের সাথে কখনওসখনও স্বল্প মূল্যের জিনিস বিলি করেন কাউন্সিলরেরা, যেমন চাবির রিং, ক্যালেন্ডার, কাগজের হাতপাখা ইত্যাদি। অনেক ক্যালেন্ডার পেয়েছি গত ডিসেম্বরে। প্রার্থীদের প্রচার গাড়ি দেখেছি মাঝেমধ্যে, তবে সেগুলি কর্ণপটহ বিদীর্ণ করে উপস্থিতি জানান দেয় না। নির্বাচনী জমায়েত হয়, তবে রাস্তা বন্ধ করে নয়। ভোটের আগে বাড়িতে ভোটার স্লিপ-সহ চিঠি আসে। ভোট হয় স্থানীয় কোনও কমিউনিটি হলে, সুশৃঙ্খল ভাবে। এখানে ইভিএম নয়, পেপারব্যালটেই ভোট হয়। সরকার বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ইত্যাদি শ্রেণির মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে নানা সুযোগসুবিধা দেয়।

ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে এখানকার ভোটব্যবস্থার প্রধান পার্থক্য— এখানে এক ভোটার মানেএক ভোট নয়। মাত্র ১৯% কাউন্সিলর সরাসরি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন।বাকিদের নির্বাচন করে হয় সরকারনির্ধারিত কমিটি বা হংকংয়ের সর্বোচ্চ পদাধিকারী চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ নিজে।আগে ৯৭% কাউন্সিলরদের জনগণ বেছে নিতেন। ২০২৩-এর জুলাইয়ে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে তা কমিয়ে ১৯ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি কারণ হয়তো ২০১৯ সালের হংকং স্তব্ধ করে দেওয়া বিক্ষোভ ও শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

এখন যে কোনও নির্বাচনে, প্রার্থীদের ভাল করে যাচাই করে নিয়ে তবেই প্রার্থী হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যাচাই পদ্ধতি জটিল, তবে প্রার্থীদের অবশ্যই দেশপ্রেমী হতে হবে। এই নিয়ে কিছু বিতর্ক হলেও যস্মিন দেশে যদাচার। সাধারণ মানুষের জীবনে নির্বাচন তেমন প্রভাব ফেলে না। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতের কাছে পাওয়া যায়, এটাই এখানে বড় ব্যাপার।

আরও পড়ুন
Advertisement