Protest In China

লাল চিনে সাদা কাগজই প্রতিবাদের প্রতীক

চিনের যে শহর থেকে করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই উহান শহরের রাস্তায় এক তরুণী হেঁটে চলেছেন। কোমরে শিকল বাঁধা, মুখে সাঁটা ব্যান্ডেজ। হাতে এক খণ্ড সাদা কাগজ।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
বেজিং শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪০
উরুমছিতে মৃতদের স্মরণে সমাবেশ হংকংয়েও। সোমবার।  ছবি: রয়টার্স।

উরুমছিতে মৃতদের স্মরণে সমাবেশ হংকংয়েও। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

রবিবার চিনের শাংহাইয়ে যখন সন্ধ্যা নামছে তখন রাস্তায় জড়ো হয়েছেন এক দল প্রতিবাদী। মোমবাতি জ্বালিয়ে, ফুলের স্তবক রেখে তাঁরা স্মরণ করছেন জিনঝিয়াং প্রদেশের উরুমছি শহরে আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তিদের। প্রত্যেকের হাতে একটি করে সাদা কাগজ।

বেজিংয়ের শিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। তাতে যোগ দিয়েছে শহরের বহু মানুষ। সকলের হাতে সাদা কাগজ।

Advertisement

একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, চিনের যে শহর থেকে করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই উহান শহরের রাস্তায় এক তরুণী হেঁটে চলেছেন। কোমরে শিকল বাঁধা, মুখে সাঁটা ব্যান্ডেজ। হাতে এক খণ্ড সাদা কাগজ।

অসন্তোষের আগুনে জ্বলতে থাকা চিনে এখন প্রতিবাদের প্রতীক— সাদা কাগজ। সাদা কাগজ কেন? বেজিংয়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ২৬ বছরের জনি বলেছেন, ‘‘আমরা অনেক কিছু বলতে চাই, কিন্তু বলতে পারছি না। এই সাদা কাগজ সেটাই বোঝাচ্ছে।’’ আর শাংহাইয়ের এক প্রতিবাদী মহিলার কথায়, ‘‘এই কাগজে হয়তো কিছু লেখা নেই, কিন্তু আমরা জানি এতে কী আছে।’’ করোনা সংক্রমণ রোখার নাম করে চিন সরকার যে বজ্রকঠিন বেষ্টনীতে নাগরিক জীবনকে বেঁধে রেখেছে, তাঁর অন্দরের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা-রাগ সবই রয়েছে ওই সাদা কাগজে। তাই সাদা কাগজ হাতে মাও জে দংয়ের দেশের বিভিন্ন শহরে আজও পথে নেমেছেন বহু মানুষ।

চিনে সাদা কাগজ হাতে বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে, ভারতে জরুরি অবস্থার সময় অনেক সংবাদপত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভ ফাঁকা রেখে প্রতিবাদ করত। বছর দুয়েক আগে হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রতিবাদীরা সাদা কাগজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রতিবাদে রাশিয়ার মস্কো শহরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল, সেখানেও প্রতিবাদীরা সাদা কাগজকে ‘অস্ত্র’ করেছিলেন।

শনি এবং রবিবারের তুলনায় আজ চিনের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা-নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের তীব্রতা আরও বেড়েছে। শাংহাই, বেজিংয়ের পাশাপাশি নানঝিং, উহান, চেন্দুং শহরেও আজ বহু মানুষ পথে নেমেছেন। চোখে পড়ার মতো বিষয় হল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিপুল সংখ্যায় বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। কঠোর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান উঠছে, ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধেও।

গত কাল তেমন বলপ্রয়োগ না করলেও আজ দমনপীড়ন শুরু করেছে প্রশাসন। শাংহাইয়ের রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের রুখতে তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। বহু প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিবিসি-রএক সাংবাদিককে গ্রেফতার এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও চিনের বিদেশ দফতরের বক্তব্য, গ্রেফতার করার সময় ওই সাংবাদিক তাঁর পরিচয় দেননি। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সুইৎজ়ারল্যান্ডের এক সাংবাদিককে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে নিজের পরিচয় দিলে ওই সাংবাদিক এবং তাঁর সঙ্গে ক্যামেরাম্যানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলপ্রয়োগের পাশাপাশি, চলছে ব্যাপক হারে সেন্সরশিপ। সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই প্রতিবাদের মুখে পড়ে জিনঝিয়াং প্রদেশে কোভিড-বিধি কিছুটা হলেও শিথিল করেছে প্রশাসন। আজ সাংবাদিক বৈঠক করে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামিকাল থেকে বার হতে পারবেন বাসিন্দারা, গণপরিবহণে যাতায়াতও করা যাবে। তবে উড়ান ও গণপরিবহণ চলবে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। কিন্তু সপ্তাহান্তে বাড়িতেই থাকতে হবে।

চিনের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চায়না ডায়লগ-এর প্রতিষ্ঠাতা ইসাবেলা হিলটন। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-বিধি নিয়ে জনতার দাবি আজ নয় কাল হয়তো সরকার মেনে নেবে। কিন্তু যে ভাবে জিনপিং এবং কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধী স্লোগান উঠেছে, তার ফল ভাল না-ও হতে পারে। জনগণের উপর সর্বদা সরকারের নজরদারি রয়েছে। কে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে— সব জানে পার্টি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement