বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক (বাঁ দিকে)। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এক সময় তাঁরা একে অপরের বিশ্বাসভাজন এবং কাছের মানুষ বলেই ব্রিটেনবাসী জানত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। দেশের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের সেই চাপানউতোর এ বার বেআব্রু হয়ে পড়ল। প্রকাশ্য জনসভায় গতকাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে আক্রমণ করলেন বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। পাল্টা জবাবে সুনককে আক্রমণ করলেন বরিসও।
কোভিডের সময়ে সরকারি নীতি ভেঙে পার্টি করার ঘটনায় তদন্তকারী কমিটিকে মিথ্যে বলার অভিযোগে সম্প্রতি কনজ়ারভেটিভ দলের এমপি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বরিস। তার পরেই সুনকের নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ বার সুনক প্রকাশ্য জনসভায় বরিসের বিরুদ্ধে তাঁর ঘনিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা ‘পাইয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ তুললেন।
গত কাল লন্ডনের এক সভায় সুনক বলেন, হাউস অব লর্ডসের (ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ) সদস্যপদের জন্য ৮ জন ঘনিষ্ঠের নাম প্রস্তাব করেছিলেন বরিস। কিন্তু এই দায়িত্বে থাকা ‘হাউস অব লর্ডস অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিশন’ তাঁদের সকলের নাম খারিজ করে দেয়। এর পরে বরিস সংশ্লিষ্ট কমিশনের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ চার জন টোরি এমপিকে ওই পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন সুনককে। সুনক অবশ্য তা করেননি। তিনি জানান, বরিসের পরে ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের কাছে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর জবাবে মুখ খুলেছেন বরিস। সুনকের দাবি নস্যাৎ করে তিনি বলেছেন, ‘‘ভুলভাল কথা বলছেন ঋষি সুনক। আমি কখনও কমিশনের সিদ্ধান্তকে উড়িয়ে দিইনি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা যায় কি না, সেই প্রস্তাবই দিয়েছিলাম।’’
বরিসের প্রস্তাবিত যে চার জন ব্রিটিশ এমপি-র নামে এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে, তাঁদের অন্যতম হলেন নাদিন ডরিস। বরিস-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত তিনি। গত কাল রাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি সুনকে ‘মুখোশধারী’ বলে ক্ষোভ উগরে দেন। সুনকের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা এবং নিষ্ঠুরতার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, সুনক বরিসকে ভুয়ো আশ্বাস দিয়েছিলেন যে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন।
প্রসঙ্গত, বরিস ছাড়াও কনজ়ারভেটিভ দলের এমপি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আরও দু’জন। ডরিস তাঁদের অন্যতম। ফলে পার্লামেন্টে এখন তিনটি এমপির আসন খালি রয়েছে। নতুন এমপি বাছাইয়ের জন্য ভোটাভুটি হলে সেগুলি বিরোধীদের হাতে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ফলে বরিসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুললেও তাঁর পদত্যাগকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন সুনকও।