— ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরও দুই সমন্বায়ককে ভোররাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। ওই দুই সমন্বায়কের নাম নুসরাত তাবাসসুম এবং আরিফ সোহেল। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসাবে পরিচয় দিয়ে এক দল লোক গভীর রাতে আটক করে নিয়ে যায় ওই শিক্ষার্থীদের।
নুসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি। নুসরতের ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব তিনি। এর আগে ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবেও কাজ করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন নুসরত। রবিবার ভোরে মিরপুরের রূপনগর এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। নুসরতের বোন জানিয়েছেন, রূপনগরে এক বহুতলের চার তলায় থাকেন তাঁরা। রবিবার ভোররাতে মূল গেট ভেঙে সাদা পোশাকে এক দল লোক ওই বহুতলে ঢুকে পড়ে। তাদের সঙ্গে এক মহিলাও ছিল। নিজেদের ‘গোয়েন্দা পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে নুসরতকে নিয়ে যায় তারা।
আটক আর এক শিক্ষার্থীর নাম আরিফ সোহেল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি। শনিবার রাত ৩টে নাগাদ সাদা পোশাকে এক দল লোক একই কায়দায় তুলে নিয়ে যায় তাঁকে। আরিফের বাবা মহম্মদ আবুল খায়ের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগন্তুকদের সকলের হাতে অস্ত্র ছিল। পরিচয় জানতে চাইলে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ হিসাবে পরিচয় দেয় তারা। গোটা বাড়ি তল্লাশির পর আরিফকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরিবারের সকলের মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ আটক করা হয়েছে নুসরতকে। তবে আরিফের বিযয়টি নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, শনিবারই আন্দেলনের আরও দুই সমন্বায়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থাতেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে। শনিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেছেন, ‘‘ওই পাঁচ জন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে ছিল। সে জন্যই তাদের হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।’’
অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার বিষয়ক সরকারি প্রজ্ঞাপনকে ইতিমধ্যেই প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার রাতে একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করে নতুন তিন দফা দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এই দাবি অনুযায়ী, আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত কনস্টেবল থেকে মন্ত্রী— সকলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার সহযোগিতা না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগোবে তারা।
বিগত দুই সপ্তাহ ধরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আগুন। দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নামেন। পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। চাকরি থেকে জনজাতিদের জন্য সংরক্ষণ বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। তার মধ্যেই সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট গত ২১ জুলাই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সাত শতাংশ সংরক্ষণ রেখে বাকি সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দেয়। এতে আন্দোলনের আঁচ খানিক কমলেও এখনও পুরোনো ছন্দে ফেরেনি বাংলাদেশ। কার্ফু শিথিল হতে না হতেই পুরোদমে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলো বলছে, শনিবার পর্যন্ত ১১ দিনে সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন ন’হাজারেরও বেশি মানুষ। সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনে ১৪৭ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও অন্যান্য সূত্র বলছে, সংখ্যাটা ২০০রও বেশি।