TMC

বিজয়া সম্মিলনীতে জেলায় জেলায় ‘লক্ষ্মী’র ভিড় বেশি, আরজি কর-কাণ্ডের পরে ‘স্বস্তি’ দেখতে চায় তৃণমূল

তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই মানেন, আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন সাংগঠনিক স্তরে তাঁদের মনোবলকে ধাক্কা দিয়েছিল। তাঁদের দাবি, বিজয়া সম্মিলনীর কর্মসূচি সেই জড়তা কাটিয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৬
Women\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s presence in Bijoya Sammilani was more than men, TMC sees silver lining

বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে মহিলাদের উপস্থিতি। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।

আরজি করের ঘটনা নিয়ে কলকাতা-সহ জেলার শহর, মফস্‌সলে যে ভাবে সাধারণ মহিলারা রাস্তায় নেমেছিলেন গত অগস্ট-সেপ্টেম্বরে, তা ‘উদ্বেগ’ তৈরি করেছিল শাসকদলের অন্দরে। নাগরিক আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন তৃণমূলের সমর্থক বাড়ির মহিলারাও। শামিল হয়েছিলেন নেতা-কর্মীদের স্ত্রী এবং আত্মীয়াদের একাংশ। কিন্তু পুজোর পর জেলায় জেলায় বিজয়া সম্মিলনীতে মহিলাদের জমায়েত দেখে ‘স্বস্তি’ পেতে চাইছে শাসকদল। যে সূত্রে তাদের আশা, ভোট-ভান্ডারের ‘লক্ষ্মী’রা অচলাই আছেন।

Advertisement

উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল— বিভিন্ন জেলায় ঘুরে তৃণমূলের যে নেতারা বিজয়া সম্মিলনীতে বক্তৃতা করেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই দাবি, সব জায়গাতেই পুরুষের চেয়ে মহিলাদের আধিক্য ছিল। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বিজয়া সম্মিলনীর জমায়েতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের উপস্থিতিই দুই-তৃতীয়াংশ।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি বাংলার মহিলাদের যে সমর্থন, আস্থা অটুট রয়েছে, বিজয়া সম্মিলনীর জমায়েত তারই প্রতিফলন।’’

পাল্টা বিজেপি নেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল মনে করেন, মমতার ভোটের যে মূল দুই ভিত সংখ্যালঘু অংশ এবং মহিলা— আরজি কর-আন্দোলন সেই মহিলা ভোটে ধাক্কা দিতে পেরেছে। অগ্নিমিত্রার কথায়, ‘‘তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীতে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা বেশির ভাগই শাসকদলের ক্যাডার। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সারা বাংলার সাধারণ মেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। যা তৃণমূলের ভিত্তিতে ধাক্কা দিয়েছে।’’

বিজয়া সম্মিলনীতে তরুণ নেতাদেরই বেশি করে জেলায় পাঠিয়েছিল তৃণমূল। তালিকায় ছিলেন টিএমসিপি নেতা সুদীপ রাহা, কোহিনুর মজুমদার, দলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত, অরূপ চক্রবর্তীরা। পাশাপাশিই ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারেরাও। নিজেদের এলাকায় বিজয়া সম্মিলনী করেছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের মতো প্রবীণেরাও। লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে ওই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। শেষ হয়েছে বুধবার। সব জেলার সব ব্লক তো বটেই, পঞ্চায়েত স্তরে অঞ্চলভিত্তিক এবং পুরসভা স্তরে ওয়ার্ডভিত্তিক বিজয়া সম্মিলনী হয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার জমায়েত হয়েছে গত ১৫ দিনে।

প্রসঙ্গত, এ বারের বিজয়া সম্মিলনীর সূচি নির্ধারণ করেছিল তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর। তবে দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, মহিলাদের জমায়েত বেশি করতে হবে, এমন কোনও সাংগঠনিক নির্দেশ ছিল না। সাধারণ প্রক্রিয়া মেনেই জমায়েত হয়েছে। তবে শাসকদলের নেতারা মানছেন, বিজয়া সম্মিলনীতে মহিলাদের ভিড়ের ছবি দলের কাছে ‘ইতিবাচক’, ‘স্বস্তিদায়ক’ এবং ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’।

আরজি কর আন্দোলনের গোড়ায় তৃণমূলের কলকাতার নেতাদের মধ্যে নানা ধরনের ‘আশঙ্কা’ কাজ করছিল। তবে জেলার নেতারা তখন থেকেই বলে আসছিলেন, গ্রামাঞ্চলে শহরের মতো প্রভাব পড়েনি। তবে সেপ্টেম্বরের গোড়ায় আরজি কর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল বেশ কিছু গ্রামীণ জনপদে। তখনও জেলা স্তরের নেতারা বলেছিলেন, ওই আন্দোলন ‘সাময়িক’ এবং তা মমতা বা তৃণমূল-বিরোধী আন্দোলন নয়। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার বিচারের দাবি। আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন টিএমসিপি-র সভায় অভিষেক বলেছিলেন, তৃণমূল ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচি এবং নাগরিক আন্দোলনকে সম্মান জানায়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন ক্রমশ স্তিমিত হচ্ছিল। পুজোর আগে তা কলকাতাকেন্দ্রিক এবং আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের ‘আমরণ অনশন’ মঞ্চ কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। অনশন উঠে যাওয়ার পরে আন্দোলনের সেই ‘ঝাঁজ’ও কমতির দিকে।

তৃণমূলের প্রথম সারির অনেক নেতাই মেনে নেন, আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন সাংগঠনিক স্তরে দলের কর্মী তো বটেই, নেতাদেরও অনেককে ধাক্কা দিয়েছিল। নাগরিক আন্দোলন স্তিমিত হওয়ায় তৃণমূল বিজয়া সম্মিলনীকে সাংগঠনিক ‘ঝাঁকুনি’ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। তা ‘সফল’ বলেই মনে করছেন দলের নেতারা। মহিলাদের ভিড় তাঁদের কাছে ‘উপরি’। নেতাদের বক্তব্য, মহিলাদের ভিড়ের বিষয়টি কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। তা আলিপুরদুয়ারের চা বাগান লাগোয়া গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতা পর্যন্ত বাস্তব। ফলে মহিলাদের আধিক্যকে সার্বিক ভাবে সমগ্র রাজ্যের ছবি বলে ধরে নিতে চাইছে তৃণমূল। ২০২৪ সালের প্রায় সমস্ত বিজয়া সম্মিলনীতেই ২০২৬ সালের ভোটের প্রস্তুতির কথাও বলা হয়েছে।

গত লোকসভা ভোটে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে তৃণমূল জয় পেলেও দেখা গিয়েছিল, শহরাঞ্চলে বাংলার শাসকদল ধাক্কা খেয়েছে। ভোটের অঙ্ক স্পষ্ট করে দিয়েছিল, গ্রামাঞ্চলের জোরেই শহরের ভোটের ক্ষতে প্রলেপ দিতে পেরেছিল তৃণমূল। সেই শহর-মফস্সলেই আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে নাগরিক আন্দোলন সব চেয়ে বেশি অভিঘাত তৈরি করেছিল। যা তৃণমূলের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বিজয়া সম্মিলনীতে মহিলাদের উপস্থিতি সে উদ্বেগ কাটাতে পেরেছে বলে আশাবাদী শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা।

আরও পড়ুন
Advertisement