BJP Core Committee Meeting

ভোটে বিপর্যয়: পাঁচ ভাগে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত বিজেপির শুভেন্দুহীন বৈঠকে, কথা আসন্ন উপনির্বাচন নিয়েও

কোর কমিটির বৈঠকে রাজ্যের আসন্ন চার বিধানসভার উপনির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই মানিকতলা, রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ এবং বাগদায় উপনির্বাচন হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ২২:২৪
Why the disaster in the Lok Sabha Election in West Bengal, Discuss on BJP\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s core committee meeting

(বাঁ দিক থেকে) শান্তনু ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকে। সূত্রের খবর, শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে ভোট বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে সাংগঠনিক স্তরে সমীক্ষা চালিয়ে বিশ্নেষণ করা হবে। রাজ্য দফতরে বসে সেই সমীক্ষা বা বিশ্লেষণ চালানো হবে না।

Advertisement

বাংলায় বিজেপির পাঁচটি সাংগঠনিক জ়োন রয়েছে। সেগুলি হল— উত্তরবঙ্গ, নবদ্বীপ, রাঢ়বঙ্গ, কলকাতা এবং হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর। এই পাঁচটি জ়োনে আলাদা আলাদা ভাবে সমীক্ষা চালিয়ে বিপর্যয়ের কারণ খোঁজা হবে বলে সূত্রের খবর। আরও খবর, বিজেপির এই পাঁচটি সাংগঠনিক জ়োনে আলাদা করে বৈঠক করা হবে। সেই বৈঠকে ডাকা হবে সংশিষ্ট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীদের। বৈঠকে থাকতে পারেন জেলা সভাপতিরা। এ ছাড়াও প্রত্যেকটি বিধানসভা এবং লোকসভার ইনচার্জদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা।

সেই বৈঠকেই বিপর্যয়ের পর্যালোচনা করা হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। তবে কবে কোথায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনও জানা যায়নি। শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে এই গোটা প্রক্রিয়াটি পরিচালনা হবে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর নজরদারিতে।

এ ছাড়াও কোর কমিটির বৈঠকে রাজ্যের আসন্ন চার বিধানসভার উপনির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই মানিকতলা, রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ এবং বাগদায় উপনির্বাচন হবে। এই সব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। সূত্রের খবর, শনিবারের বৈঠকে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে থেকেই উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। সেই মতো প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তিন জনের নাম ঠিক করা হয়েছে। মোট ১২ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে খবর। রবিবারই সেই তালিকা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠাবেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। সেখান থেকেই প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে।

সুনীল বনসল ছাড়া শনিবারের কোর কমিটির বৈঠকে ছিলেন বাকি তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালবীয় এবং আশা লাকড়া। এ ছাড়াও বৈঠকে এসেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। পাশাপাশি পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক— জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় মাহাতো এবং দীপক বর্মণ ছিলেন এই বৈঠকে। মন্ত্রী হিসাবে ছিলেন শান্তনু ঠাকুর। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে দিলীপ ঘোষও শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ঘণ্টাখানেকের বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রেই ছিল ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ। ভোট মেটার পরেও বাংলার কোথাও কোথাও অশান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপির অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি ছড়াচ্ছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’র ঘটনা কী ভাবে সামলানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে শনিবারের বৈঠকে। সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে বিজেপি জেলাওয়াড়ি একটি তালিকা প্রস্তুত করবে। সেই তালিকায় থাকবে কারা কারা আক্রান্ত হয়েছেন, কারা ঘরছাড়া। তাঁদের কী ভাবে আইনি সাহায্য দেওয়া যায় তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।

শনিবারের কোর কমিটির বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন না। কলকাতায় যখন বৈঠক হচ্ছিল, তখন তিনি এবং প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ছিলেন কোচবিহারে। ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে কোচবিহারে বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। অনেকেই ‘ঘরছাড়া’! তাঁদের বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে দাঁড়িয়েই শুভেন্দু জানান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই কোচবিহারে এসেছেন তিনি। পাশাপাশি এ-ও বলেন, ‘‘যত দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আক্রান্তদের বাড়িতে না পৌঁছনো হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত তাঁদের থাকা-খাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করবে দল।’’

উল্লেখ্য, রবিবারই রাজ্যে এসে পৌঁছবে বিজেপির বিশেষ প্রতিনিধি দল। ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসছে তারা। প্রথমে যাবে মাহেশ্বরী ভবনে। সেখানেই ভোট পরবর্তী ‘হিংসায় ঘরছাড়া এবং আক্রান্ত’দের রেখেছে বিজেপি। সেই ‘আক্রান্ত’দের সঙ্গে দেখা করার পর বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার, সন্দেশখালি, বাসন্তী ঘুরে দেখবেন সদস্যেরা। সেখানে কথা বলবেন ‘আক্রান্ত’দের সঙ্গে। এর পর সোমবার দলের সদস্যেরা কলকাতায় ফিরে রওনা দেবেন কোচবিহারের উদ্দেশে। সেখানে ‘হিংসায় আক্রান্ত’দের সঙ্গে কথা বলার পর ফিরে যাবেন দিল্লি। কোর কমিটির বৈঠকে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর ‘আক্রান্ত’ দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিধানসভা ভিত্তিক নেতাদেরও এই কাজে লাগানোর ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে শনিবারের বৈঠকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement