Samik Bhattacharya

বড় সঙ্কটের সহজ সমাধান খুঁজলেন মোদী-শাহ, অঙ্ক কষেই বিজেপি শমীককে রাজ্যসভায় পাঠাতে চায়!

রাজ্য থেকে দু’জন সাংসদ রাজ্যসভায় পাঠানোর শক্তি গত বিধানসভা নির্বাচনে পায় বিজেপি। প্রথম সুযোগটি পান দলের বাইরের অনন্ত রায়। এ বার দলের পুরনো নেতা শমীক ভট্টাচার্য। কোন অঙ্কে?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪১
(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং শমীক ভট্টাচার্য।

(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং শমীক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

সামনেই লোকসভা নির্বাচন। কোন আসনে দলের ‘আদি’ নেতা শমীক ভট্টাচার্য প্রার্থী হবেন তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল। পুরনো আসন দমদম থেকেই আবার লোকসভায় লড়বেন শমীক, না কি নতুন আসন! এমন চর্চার মধ্যেই ভোটের লড়াই থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক। লোকসভা ভোটের আগেই বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জন্য তাঁর নামই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ঘোষণা হয়ে গেল রবিবার সন্ধ্যায়।

Advertisement

রাজ্যসভার পাঁচটি আসনে নির্বাচন। বিধায়ক সংখ্যার বিচারে একটি আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত। তবু দলের অঙ্ক মিলিয়ে দিতে হবে বিজেপির পরিষদীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শমীকের জয় যে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত সেটা জানিয়ে নাম ঘোষণার পরে পরেই সমাজমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। একই ভাবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও সমাজমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

আসলে রাজ্য বিজেপিতে শমীক এমন এক জন নেতা যিনি শুভেন্দু, সুকান্ত সকলের পছন্দের। আবার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও পছন্দের। সেটা বরাবরই। কারণ, দীর্ঘ দিন বিজেপিতে থাকলেও কোনও সাংগঠনিক বিতর্কে জড়াননি শমীক। যে কোনও বিষয়ে দলের পক্ষে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যাপারেও কখনও তেমন বিতর্ক তৈরি করেননি। দলের সঠিক বক্তব্য কী হবে সেটা নিয়ে তাঁকে আলাদা করে কোনও নির্দেশও দিতে হয় না। আসলে দীর্ঘ দিন বিজেপিতে থাকা শমীকের আদর্শগত অবস্থান নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি।

এই প্রথম নয়, গত জুলাই মাসে যখন প্রথমবার রাজ্য বিজেপির পক্ষে কোনও এক জনকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সুযোগ হয়েছিল তখনই মনে করা হয়েছিল প্রার্থী করা হতে পারে শমীককে। রাজ্য নেতৃত্ব সেটা চেয়েও ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী করে কোচবিহারের বাসিন্দা রাজবংশীদের ‘স্বঘোষিত’ মহারাজা অনন্ত রায়কে। অঙ্ক ছিল, অনন্ত সঙ্গে থাকা মানে রাজবংশী ভোট নিশ্চিত। অতীতে রাজবংশী ভোট বিজেপির পাশে থাকলেও এবং পদ্মশিবিরের প্রতি অনন্তের সমর্থন থাকলেও এ বার সেটা পাকাপাকি করতে চান অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রয়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পছন্দেই অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়।

গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজবংশী অধ্যুষিত দিনহাটা আসনে বিজেপি জয় পেয়েছিল। কিন্তু এখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক জিতেছিলেন মাত্র ৫৭ ভোটে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তখন অসমে থাকা অনন্তের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন শাহ। এর পরেও এত খারাপ ফল আশাই করেনি বিজেপি। নিশীথ বিধায়ক পদ ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজেপি হারে ১,৬৪,০৮৯ ভোট। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এই হারকে সহজ চোখে দেখেনননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর পরেই ঠিক করা হয় অনন্তকে দলে এনে রাজবংশী ভোট পদ্ম প্রতীকে এককাট্টা করতে হবে। কিন্তু অনন্তকে এনে আদৌ লাভ হয়েছে কি না সেটা নিয়েই প্রশ্ন ছিল। কারণ, ২০২১ সালে চার হাজারের বেশি ভোটে জেতা ধূপগুড়ি আসনে ২০২৩ সালে হওয়া উপনির্বাচনে বিজেপি হেরে যায় চার হাজারের বেশি ভোটে। সেই সময়ে সাংসদ হয়ে গিয়েছেন অনন্ত।

অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পরে পরেই রাজ্য বিজেপি বুঝতে পারে সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। কারণ, একাধিক বার প্রকাশ্যে দলের নীতির বাইরে গিয়ে কথা বলেন অনন্ত। পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবিও তাঁর মুখে শোনা যায়। আবার রাজবংশীদের মধ্যে একটা বড় অংশ অনন্তের কথা শোনে না। সেই সব দেখে ধূপগুড়ি উপনির্বাচন তো বটেই পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অনন্তকে নাম কা ওয়াস্তে ব্যবহার করে পদ্মশিবির। তবে বিজেপির অনেকে এমনটাও বলেন যে, অনন্তকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ, উপনির্বাচনে বিজেপির জেতার আশা ছিল না। অনন্তকে সাংসদ করায় হারের ব্যবধান অনেকটাই কমে।

এই সব বিতর্কের মধ্যে এ বার আর বাইরের কাউকে রাজ্যসভায় না পাঠানোয় মত ছিল সুকান্ত, শুভেন্দুদের। আবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও একটা অঙ্ক কষেছেন শমীককে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে। রবিবার তাঁর নাম ঘোষণার দলের এক আদি নেতা বলেন, ‘‘আমরা খুব খুশি। বিজেপিতে যাঁরা পুরানোরা রয়েছেন তাঁরা সকলেই খুশি হবেন। তাঁকে দেওয়া সম্মান আসলে দলের আদি নেতা, কর্মীদের প্রতি সম্মান।’’

লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপির সব চেয়ে বড় চিন্তা ছিল দলের সেই সব পুরনো কর্মীদের নিয়ে যাঁরা কাজের মধ্যে নেই। অনেকেই ঘরে বসে গিয়েছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিদ্রোহও করছেন। তাঁদের সকলের কাছেই শাহ কিংবা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটা বার্তা দিতে পারলেন যে, দলের পুরনো নেতাদেরও সম্মান দেওয়ার পক্ষেই দল। এমনটা বলছেন বিজেপি নেতারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘শমীক হলেন বিজেপির ‘হলমার্ক’ দেওয়া নেতা।’’

১৯৭৪ সাল নাগাদ হাওড়ার মন্দিরতলা এলাকায় আরএসএস-এর শাখায় যাতায়াত শুরু শমীকের। এর পরে ঘনিষ্ঠতা। সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য পরিচয় নিয়ে রাজনীতিতে যোগ। দলের রাজ্য সভাপতি যখন তথাগত রায় তখনই উত্থান শুরু। সেই সময়েই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক হন। রাহুল সিংহের সময় পর্যন্ত ওই পদেই ছিলেন। পরে দিলীপ রাজ্য সভাপতি হলে হন প্রধান মুখপাত্র। তবে যখন রাজ্যে কোনও শক্তিই ছিল না বিজেপির তখন থেকে এখন পর্যন্ত এক ভাবে বিজেপির মুখ হিসাবে সংবাদমাধ্যমকে সামলেছেন দলের মধ্যে ‘বাগ্মী’ হিসাবে পরিচিত শমীক। তিনিই দলের একক শক্তিতে প্রথমবার বিধানসভায় গিয়েছেন ২০১৪ সালে। এর পরে অনেক নির্বাচনে লড়াই করলেও জয় পাননি। অবশেষে নিশ্চিত জয়ের আশা নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে যাওয়ার সুযোগ পেলেন শমীক।

আরও পড়ুন
Advertisement