R G kar Incident

রাত পোহালে তাঁর হাতেই রায় লেখা হবে আরজি কর মামলার, বিচারককে জানুন আনন্দবাজার অনলাইনে

শনিবার সারা দিন আতশকাচের তলায় থাকবেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। নজরে থাকবেন আরও এক জন। তিনি হলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস।

Advertisement
সারমিন বেগম
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:০৪
শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা হবে শনিবার।

শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা হবে শনিবার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শনিবার দুপুরে আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে শিয়ালদহ আদালতে। চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের পরিণতি কী হয়, তা জানতে এ রাজ্য তো বটেই, গোটা দেশই মুখিয়ে রয়েছে। শনিবার আতশকাচের তলায় থাকবেন ওই মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। নজরে থাকবেন আরও এক জন। তিনি শিয়ালদহ আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস, যাঁর হাতে লেখা হবে সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে (এবং দেশে-বিদেশে) সবচেয়ে সাড়া জাগানো মামলার রায়। রায় তো বটেই, বিচারক দাসের বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিও।

Advertisement

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্যতম বড় নাগরিক আন্দোলন দেখা গিয়েছিল রাজপথে। যে আন্দোলন ছিল রাজনীতির ঝান্ডাবিহীন। কাতারে কাতারে সাধারণ মানুষ ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-মিছিলের একের পর এক ‘বেনজির’ ছবি দেখেছে গোটা দেশ। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশও। সেখানে প্রবাসী বাঙালিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। মানববন্ধন করেছেন তাঁদের মতো করে।

আশ্চর্য নয় যে, সেই মামলা যাঁর এজলাসে হয়েছে, সেই বিচারকের উপর সকলের নজর থাকবে। অবশ্য ঘটনাচক্রে, এর আগেও বিচারক দাস এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তখন তিনি কর্মরত ছিলেন বারাসতে মাদক কারবার সংক্রান্ত মামলার শুনানি যে আদালতে হয়, সেখানে। বিভিন্ন সময়ে বিচার করে তিনি অসংখ্য ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলায় দোষীদের দণ্ড দিয়েছেন।

আদালতের সূত্রের বক্তব্য, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশ করেছেন বিচারক দাস। ১৯৯৫ সালে এলএলবি (ব্যাচেলর অফ লেজিসলেটিভ ’ল) পাশের পর মুর্শিদাবাদে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথম দিকের সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে অনেক সময়েই ঘনিষ্ঠমহলে বিচারক দাস আইনজীবী কিশলয় সেনগুপ্তের কাছে তাঁর ঋণের কথা উল্লেখ করেন। অনির্বাণ দাস বিচারক হন ১৯৯৯ সালে। সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশন) হিসাবে কর্মরত ছিলেন কৃষ্ণনগরে। পদোন্নতির পরে বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন বিচারক দাস। ২০১১ সালে তিনি অতিরিক্ত জেলা জজ হন। পদোন্নতি হয় দু’বছরের মধ্যে। ২০১৩ সালে জেলা বিচারকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। শিয়ালদহ আদালতে যোগ দেওয়ার অব্যবহিত আগে তিনি ছিলেন পুরুলিয়ায় কর্মরত। শিয়ালদহ আদালতে এসেছেন বছর দুয়েক আগে। ওই আদালতে পকসো মামলার শুনানিও তাঁর এজলাসেই হয়।

বিচারক দাসের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, তিনি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ‘সহকারী আইনি উপদেষ্টা’ হিসাবেও কাজ করেছেন। রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত যুগ্ম ‘লিগ্যাল রিমেমব্র্যান্সার’ হিসাবেও কর্মরত ছিলেন। দেওয়ানি (সিভিল) আদালতে সরকারের পক্ষে যাঁরা সওয়াল করেন, তাঁদের ‘লিগ্যাল রিমেমব্র্যান্সার’ বলা হয়। কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসাবেও কর্মরত ছিলেন বিচারক দাস। হাই কোর্টের ‘মেডিয়েশন কমিটি’র সেক্রেটারিও ছিলেন। পরে এনডিপিএস (যেখানে মাদক সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়) আদালতের বিচারক হন। সেখানেই এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিয়েছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে বিচারক দাস খুব গুরুগম্ভীর নন বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, আদালতে তাঁর পরিচিতি ‘বিচক্ষণ’ মানুষ হিসাবে। বস্তুত, শিয়ালদহ আদালতে কর্মরত অনেকে মনে করেন, আরজি কর মামলাতেও তাঁর ‘বিচক্ষণতার’ প্রমাণ মিলেছে।

গত ১১ নভেম্বর থেকে আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল শিয়ালদহ আদালতে বিচারক দাসের এজলাসে। বিচারক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ইন ক্যামেরা’ হবে। অর্থাৎ, রুদ্ধদ্বার কক্ষে চলবে বিচার। সেইমতোই রুদ্ধদ্বার বিচারপ্রক্রিয়া চলেছে। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে মোট ৫০ জনের। মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহত চিকিৎসকের পিতা, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েক জন সহপাঠী। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার দু’মাস পর শনিবার রায় ঘোষণা করতে চলেছেন বিচারক দাস। রায় ঘোষণাও দিনটিও তিনিই আদালতে জানিয়েছিলেন। তবে অভিযুক্ত দোষী হলে তিনি শনিবারেই তাঁর শাস্তি ঘোষণা করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তেমন হলে শাস্তি ঘোষণা করা হবে সোমবার।

জাতীয় স্তরে বিস্তর আলোড়ন ফেলেছিল আরজি করের ঘটনা। ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টেও। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে তার শুনানি চলেছিল। কলকাতা হাই কোর্টও আরজি কর-কাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাপরম্পরার প্রেক্ষিতে নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই নিম্ন আদালতে আরজি কর মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার দিকেও উচ্চ আদালত এবং শীর্ষ আদালতের নজর ছিল। শিয়ালদহ আদালতে কর্মরত অনেকের মতে, আরজি করের মতো ‘স্পর্শকাতর’ মামলায় সেই ‘চাপ’ সামলে নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে এবং যথাসম্ভব দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করা তত সহজ ছিল না। কিন্তু বিচারক দাস বিচক্ষণতার সঙ্গেই সেই দিকটি সামলেছেন বলে তাঁদের অভিমত। শুক্রবার এক কর্মী যেমন বলেছেন, ‘‘বিচারক অনির্বাণ দাস আইন খুব ভাল বোঝেন। ভীষণ সময়নিষ্ঠও উনি। ওঁর এজলাসে সব কিছু সময়ের মধ্যেই শেষ হয়।’’

(আরজিকর মামলা ‘স্পর্শকাতর’ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা বিচারক অনির্বাণ দাসের ছবি এই লেখার সঙ্গে ব্যবহার করলাম না)

Advertisement
আরও পড়ুন